কেউ ফুল নিয়ে কথা বললেই যে ফুলের ছবি তার মনে এঁকে যায় সেটা হচ্ছে গোলাপ।
ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ও গোলাপ দিয়ে জানানো হয়।
গোলাপ তার নিজের সৌন্দর্য ও সুগন্ধ দিয়ে সবার মন কেড়েছে বার বার।
বিভিন্ন শৈল্পিক কাজ, সুগন্ধি, প্রেমের নানা গল্প ও মন ভালো রাখতে সেই প্রাচীন কাল থেকেই জায়গা করে নিয়েছে সবার মনে।
সৌন্দর্যে গোলাপ
বাহ্যিকভাবে দেখতে গেলে গোলাপ সৌন্দর্যের প্রতীক।
কিন্তু রুপচর্চায় ব্যবহার এর ক্ষেত্রে এর কোনো জুড়ি নেই।
গোলাপের গুণাগুণ বলে শেষ করা যাবে না।
স্কিন ময়েশ্চারাইজিং এর থেকে শুরু করে টোনিং, ক্লিঞ্জিং, স্ক্রাবিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে গোলাপের ভূমিকা অনেক বেশি।
এটি রুক্ষ, শুষ্ক ও তৈলাক্ত সব রকমের ত্বকের জন্য উপকারী।
এমনকি সেন্সিটিভ ত্বক এই গোলাপ জল ব্যবহার করলে কোনো এলার্জিক রিয়েকশন হয় না।
তাছাড়াও চুলের জন্য নানা ভাবে গোলাপের ভূমিকা দেখা যায়।
গোলাপ জলের উপকারিতা
- পি এইচ লেভেলের ভারসাম্য রক্ষা করে
আশেপাশের ধূলাবালি, দূষণ ও ইউ-ভি রশ্মির জন্য আমাদের ত্বক খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরে।
যার কারণে আমাদের ত্বকে নানা ধরণের সমস্যা দেখা দেয়।
এইক্ষেত্রে গোলাপের পাপড়ি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গোলাপ জল ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের পি এইচ লেভেলের ভারসাম্য বজায় থাকে ও ত্বক সুস্থ ও সতেজ থাকে।
- এন্টিঅক্সিডেন্ট
গোলাপ জলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা এন্টি এজিং হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
এন্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষ গুলিকে ভেতর থেকে দৃঢ়তা প্রদান করে তা সতেজ রাখে. যাতে করে মুখের ত্বক টানটান থাকে।
এক্ষেত্রে বয়সের ছাপ বোঝা যায় না। রিংকেল পড়ে না।
- হাইড্রেশন
গোলাপ জল খুবই ভালো ময়েশ্চরাইজার হিসেবে কাক করর।
গোলাপ জল ত্বককে ভেতর থেকে হাইড্রেট করে তা সতেজ করে তোলে।
এটি ত্বককে পুষ্টি প্রদান করে। আপনি যদি প্রতিদিন গোলাপ জলের ব্যবহার করেন তাহলে আপনার ত্বক সর্বদা মসৃণ ও কোমল থাকবে।
- দাগ দূর করতে
গোলাপ জলে আছে এন্টি ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান।
যা পিম্পল এর দাগ দূর করার সাথে সাথে কোনো আঘাতের দাগ ও দূর করার খুব বেশি কার্যকর।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
গোলাপজল এ ফ্র্যাংকেন্সিস এসেন্সিয়াল ওয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করলে খুব ভালো উপকার মিলবে।
তাছাড়াও গোলাপ জল মুলতানি মাটি ও পুনর্নভা গুড়ার সাথে এড করে এপ্লাই করলে দাগ খুব তাড়াতাড়ি দূর করা সম্ভব।
- পিম্পল দূর করতে
এন্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদানের উপস্থিতির জন্য এটি ত্বকের ফাংগাস জাতীয় ব্যাক্টেরিয়ার সাথে যুদ্ধ করে ভিতর থেকেই ফাঙ্গাস মেরে ফেলে।
আর পিম্পল হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
গোলাপজলের সাথে টি ট্রি এসেন্সিয়াল ওয়েল মিশিয়ে সেই মিশ্রণে তুলা ডুবিয়ে সেটা পিম্পল এর উপর ড্যাব ড্যাব করে ব্যাবহার করতে হবে এতে খুব শীঘ্রই পিম্পল দূর হবে।
গোলাপজলের সাথে লেবুর রস এড করে ব্যবহার করলেও পিম্পল থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
- চোখের ফোলা ভাব কমাতে
চোখের নিচের অংশ অন্যান্য অংশের চেয়ে তুলনামূলক পাতলা হয়।
তাই একটু ফুলে উঠলেই সেটা খুব বেশি বোঝা যায়। এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।
অনেকের জেনেটিক্যালি আই ব্যাগ বড় হয়, অনেকের ক্লান্তি লাগা বা ঘুম কম হওয়ার কারণেও হতে পারে।
এক্ষেত্রে গোলাপ জল ব্যবহার করে চোখের ফোলা ভাব কমানো সম্ভব।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
গোলাপজল একটি আইস ট্রে তে ঢেলে সেটা বরফ করে নিন।
বরফ হয়ে গেলে সেটা বের করে একটি পাতলা কাপড়ে পেচিয়ে ফোলা অংশে চেপে ধরুন একটু বিরতি দিয়ে দিয়ে।
এমন রেগুলার ২০ মিনিট করলে চোখের ফোলা ভাব কমে আসবে।
- মেক-আপ রিমুভার
মেকআপ রিমুভার হিসেবে গোলাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
প্রত্যেকের ত্বকের ধরন আলাদা আলাদা।
সেক্ষেত্রে সেই ত্বক গুলোর জন্য মানানসই প্রোডাক্ট বাছাই করে নেয়া ঝামেলা।
গোলাপজল এমন একটি পানি যা সব ধরণের ত্বকেই মানিয়ে যায় হোক সেটা ড্রাই, ওয়েলি কিংবা সেন্সিটিভ।
গোলাপজল ত্বকের কোনো ক্ষতি করা ছাড়াই মেকআপ রিমুভ করবে খুব সহজে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
এক চামচ নারিকেল তেল বা আমান্ড ওয়েল বাটিতে নিন।
তার সাথে ২ চামচ গোলাপজল মিক্স করুন। ভালোভাবে মিক্স করুন।
একটি কটন প্যাড এর মাধ্যমে মেকআপ রিমুভার হিসেবে ব্যবহার করুন।
জেদি কোনো ফাউন্ডেশন ও উঠে যাবে।
- ফেস মিস্ট
গোলাপজল সব ঋতুতেই উপযোগী। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা, যে কোন ঋতুতে ত্বক সতেজ রাখতে গোলাপজল ফেস মিস্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন
যেভাবে ব্যবহার করবেন
একটু ছোট স্প্রে বোতলে গোলাপ জল ভর্তি করে সেটা ব্যাগে রাখুন আপনার সাথেই।
মুখ শুকনো কিংবা ঘামে ভেজা, মুখে স্প্রে করে নিলেই রিফ্রেশমেন্ট পেয়ে যাবেন।
- ন্যাচারাল কন্ডিশনার
গোলাপ জল ত্বকের পাশাপাশি চুলের জন্য ও সমান ভাবে উপকারী। এটি খুব ভালো কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
শ্যাম্পু করার পর, এক কাপ গোলাপ জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে করে চুল উজ্জ্বল ও সুন্দর হবে।
- টোনার
টোনিং স্কিন কেয়ারের একটি গুতুত্বপূর্ণ ধাপ। ক্লিঞ্জিং এর যে ময়লা উঠে আসে না তা টোনিং এর পর রিমুভ হয়।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
ত্বক ভালো ভাবে ধুয়ে গোলাপ পাপড়ির টোনার ফুল ফেইসে স্প্রে করুন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
এতক্ষণ জানলেন গোলাপজল ও টোনারের গুণাবলী ও কার্যকারিতা।
এখন জেনে নিন গোলাপ জল ও টোনার ন্যাচারাল ভাবে একই পাত্রে কিভাবে বানাবেন।
টোনার ও গোলাপজল তৈরির প্রক্রিয়া
- কিছু ফ্রেশ গোলাপ কিনে আনুন। ত্বক আমাদের শরীরের খুবই সেন্সিটিভ একটা অংশ। তাই চেষ্টা করবেন যাতে কোনো রকম কেমিক্যাল ছাড়া গোলাপ কিনতে।
- গোলাপ এক্ষেত্রে ১০/১২ টি যথেষ্ট হবে ১ সপ্তাহের জন্য। কত দিনের জন্য বানাবেন সেই হিসেবে গোলাপের সংখ্যা বাড়িয়ে কমিয়ে নিতে পারেন।
- গোলাপ গুলো থেকে এর পাপড়ি গুলো ছিড়ে আলাদা করুন ও পানি দিয়ে ভালো ভাবে ধুয়ে ঝড়িয়ে নিন।
- একটি বড় সস প্যান বা তলানি যুক্ত কড়াই নিন। ঢাকনা এমন নিবেন যেনো হাতল টি গোলাকার হয়।
- প্যান এর মাঝে একটি ভারী কিছু যেমন শীল, এমন টাইপের কিছু রাখুন। তার উপর একটি স্টিলের বাটি রাখুন। বাটি এমন ভাবে রাখুন যাতে করে এটি গোলাপের পাপড়ি সহ পানি থেকে সামান্য উঁচু তে থাকে।
- তারপর প্যানে পরিমাণ মতো পানি দিন। তাতে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দিন। পানিতে যেন ডুবে থাকে। কিন্তু মাঝ খানের বাটিতে যেনো না যায় সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
- এবার ট্রিকি পার্ট হচ্ছে এটাই, ঢাকনা টি উলটো করে প্যানের উপর রাখুন এমন ভাবে যেন পানি ঢাকনার গায়ে লেগে থাকা বাষ্প গড়িয়ে হাতল এ জমে আর সেটা চুয়ে চুয়ে নিচের মাঝে রাখা পাত্র টিতে জমে।
চুলা জ্বালিয়ে মিডিয়াম টু লো আঁচে বসিয়ে রাখুন
- গোলাপের পাপড়ি গুলো সিদ্ধ হয়ে কিছু বাষ্পে পরিণত হয় সেইগুলো ঢাকনের গায়ে আটকে বিন্দু বিন্দু করে জমতে থাকে। সেই বিন্দু বিন্দু পানির কণা গুলো গড়িয়ে গিয়ে লিড বা ঢাকনার হাতল থেকে নিচের মাঝ খানে রাখা পাত্রটিতে জমা হতে থাকলে। এটা পিউরিফাইড রোজ টোনার। একদম পিউর গোলাপের টোনার আর আশে পাশে গোলাপের পাপড়ি জাল দেয়ার ফলে তৈরি হচ্ছে গোলাপ জল।
- গোলাপের পাপড়ি গুলো যখন লাল থেকে ফেইড হয়ে যেতে এতে সাদা বা রঙহীন হয়ে যাবে তখন বুঝতে হবে গোলাপজল রেডি।
- প্যান থেকে টোনার বের করে কোনো কাচের পাত্রে সংগ্রহ করুন। আর গোলাপের পাপড়ি ছেকে নিয়ে পানি আলাদা করে রাখুন ও স্প্রে বা আপনার পছন্দ মত এয়ার টাইট বোতলে সংরক্ষণ করুন।
এভাবে একই গোলাপের পাপড়ি দিয়ে ও একই পাত্রে বানিয়ে ফেলুন টোনার ও গোলাপ জল। টোনার বানানোর প্রসেস টি খুব ধীরগতি সম্পন্ন হলেও এটি একদম পিওর ও খুব বেশি কার্যকর। এইভাবে বানিয়ে ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করতে পারেন ২/৩ সপ্তাহ বা তার বেশি সময়।