বহু গুণে গুণান্বিত রোজমেরি তেল তৈরি হয় রোজমেরি নামক গাছের ফুল ও পাতার নির্যাস থেকে।
প্রধানত ভূমধ্যসাগর অঞ্চলে বেড়ে উঠা এই উদ্ভিদ প্রসাধনী এবং ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এতে আছে মিন্টি-বালসামিক সুবাস, এই তেল একাধারে টনিক, অ্যান্টিসেপ্টিক, কৃমিনাশক, পাচক, বেদনানাশক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিসহ আরো নানা ধরণের কাজ করে।
চুলের যত্নে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন এসেনশিয়াল অয়েলের মধ্যে রোজমেরি অয়েল অন্যতম।
এই তেলের গুণাবলি অল্প কথায় বলা মুশকিল।
চুল গজানো থেকে শুরু করে চুলের ঔজ্জ্বল্য ও প্রাণ ফিরিয়ে আনতে, চুল পুনরুদ্ধার করতে, খুশকি দূর করতে এই তেলের জুড়ি নেই।
সাধারণত গরমের চাইতে শীতের সময়ে রোজমেরি তেলের ব্যবহার চুলে দারুণ ফলাফল এনে দেয়।
কারণ শীতের শুষ্কতায় চুলের বারোটা বাজে খুব তাড়াতাড়ি, তখন শুধু শ্যাম্পু-কন্ডিশনার দিয়ে চুল ঠিক রাখা সম্ভব না।
গোসলের আগে বা রাতে শোয়ার আগে রোজমেরি তেলের ম্যাসাজ চুলকে ঠিক রাখতে সক্ষম।
রোজমেরি তেল দিয়ে বা শুকনো রোজমেরি পাতা দিয়ে চুলের পরিচর্যা করা সম্ভব।
আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি রোজমেরি তেল কিভাবে চুলে ব্যবহার করতে হয় তার বর্ণনা।
রোজমেরি অয়েল কি চুলের জন্য ভাল?
চুলের জন্য রোজমেরি অয়েল একটা অনন্য উপাদান।
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল যেমন ফ্রান্স, স্পেন, ইতালিতে চুলের যত্নে রোজমেরি অয়েল ব্যবহার চলছে প্রায় কয়েক শতাব্দী ধরে।
তারা তাদের চুলে এই তেল কয়েকভাবে ব্যবহার করে।
এই তেলের টেক্সচার হালকা, নিয়মিত ব্যবহার করলে মাথার ত্বকের ছিদ্র সহজে আটকে যায় না৷ তাছাড়া এটা চুল পড়ায় ব্যবহৃত ওষুধ মিনোক্সিডিলের মতই সমান কার্যকরী।
আবার এই তেল অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটার চিকিৎসার জন্যও ব্যবহার করা যায়।
তাতে করে যারা দীর্ঘদিন টাকের সমস্যায় ভুগছেন বা যাদের চুল গুচ্ছাকারে পড়ে গিয়ে টাক সৃষ্টি হয়েছে মাথায়, এই তেল ব্যবহার করলে দ্রুত নতুন চুল গজাবে।
বৈজ্ঞানিকভাবে ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, রোজমেরি তেলের নির্যাস প্রয়োগে ইঁদুরের লোমের বৃদ্ধি ঘটেছে।
সুতরাং এটা প্রমাণিত হয় যে রোজমেরি তেল চুল আশানুরূপ বড় করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও এই তেলের আরো ক্ষমতা আছে চুলকে আকর্ষণীয় করার।
যেসব গুনাগুণ রয়েছে
- চুলের গোড়া শক্ত করে চুল পড়া কমায়।
- মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। ফলে চুল তাড়াতাড়ি বাড়ে।
- স্ক্যাল্পের কোষ বিভাজন উদ্দীপিত করে এবং রক্তনালিগুলো প্রসারিত করে।
- এই তেল মাথার ত্বকে প্রশান্তি আনে।
- চুলের ফলিক ও মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখে বলে খুশকি/মরা চামড়া, চুল পড়া কমিয়ে আনতে কার্যকর।
- চুলের যেকোন ধরণের ক্ষতি সারাতে রোজমেরি তেলের জুড়ি নেই।
- মাথার সেবাম গ্রন্থিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে মাথার ত্বক তেল চিটচিটে হয় না।
রোজমেরি অয়েল যেভাবে চুলে ব্যবহার করতে হয়
ভাল ফলাফল পাওয়ার জন্য সপ্তাহে দুইদিন রোজমেরি তেল ব্যবহার করবেন।
চাইলে প্রতিদিনও ব্যবহার করতে পারেন, তবে এক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন যেন অতি ব্যবহারে চুলের উল্টো ক্ষতি না হয়।
পদ্ধতি ১
রোজমেরি তেল দিয়ে হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করে মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতির পাশাপাশি শুষ্ক ও ক্ষতিগ্রস্ত চুল ঠিক করতে পারবেন।
এই হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করার জন্য লাগবে –
- ২ থেকে ৪ ফোঁটা রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল
- ২ টেবিল চামচ নারকেল/জলপাই/বাদাম তেল
- তোয়ালে বা শাওয়ার ক্যাপ
- শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার
ব্যবহার বিধি
প্রথমে একটি কড়াইতে রোজমেরি তেলের সাথে নারকেল/বাদাম/জলপাই তেল মিশিয়ে হালকা গরম করতে থাকুন।
এবারে গরম করা তেল পুরো স্ক্যাল্পে ১০ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন। খেয়াল রাখবেন মাথার ত্বকের কোন একটা কোণা যেন বাদ না যায়।
পুরো স্ক্যাল্প ম্যাসাজ হয়ে গেলে গরম তোয়ালে (ব্লো ড্রায়ার দিয়ে তোয়ালে গরম করতে হবে) বা শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথাটা মুড়িয়ে নিন।
এভাবে ৩০ মিনিট রাখতে হবে। ৩০ মিনিট পরে স্বাভাবিক পানি দিয়ে চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে দুইদিন এই হট অয়েল ট্রিটমেন্ট চুলে ব্যবহার করুন।
পদ্ধতি ২
রোজমেরি তেল দিয়ে হেয়ার মাস্কও বানাতে পারেন। হেয়ার মাস্ক বানাতে যা যা লাগবে-
- ৩ চা চামচ অ্যাভোকাডো তেল•
- ১ চা চামচ গমের জীবাণু তেল
- ২০ ড্রপ রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল
- ১ চা চামচ বাদাম তেল
- মেথি গুঁড়া (পরিমাণমত)
ব্যবহার বিধি
সবগুলো একসাথে মিশিয়ে এক ঘন্টা রেখে দিন। এক ঘন্টা পরে মিশ্রণটিতে হালকা গরম পানি মিশিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন।
১০ মিনিট পরে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন।
পদ্ধতি ৩
রোজমেরি তেল দিয়ে আরেকভাবে হেয়ার মাস্ক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন৷
এটা চুল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে। এই মাস্ক বানাতে হলে আপনাকে নিতে হবে
- ৫ ফোঁটা রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল
- কয়েকটি শুকনো রোজমেরি পাতার গুঁড়া
- ১ কাপ জলপাই তেল
ব্যবহার বিধি
এই মিশ্রণ মাথার ত্বকে আধা ঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
পদ্ধতি ৪
খুশকির চিকিৎসার জন্য আপনি সরাসরি শ্যাম্পুতে রোজমেরি অয়েল যোগ করতে পারেন। প্
রতি ১৫ মিলি শ্যাম্পুতে ২ ফোঁটা করে রোজমেরি তেল মেশাবেন।
রোজমেরি অয়েল ব্যবহারে চুল কতদিনে এবং কতটুকু বাড়বে?
যদিও কেউ কেউ বলেন রোজমেরি অয়েল ব্যবহারে চুলের খুব একটা উন্নতি হয় না, কিন্তু এর নিয়মিত ও সঠিক ব্যবহারে চুল হবে ঝরঝরে, সুন্দর, এবং প্রাণবন্ত।
আপনি যদি কমপক্ষে এক মাস এই তেল ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার চুলের বৃদ্ধি হবে ৩ গুণ পর্যন্ত।
তবে এর জন্য ঘন ঘন পদ্ধতি পরিবর্তন করা যাবে না।
অর্থাৎ আপনি বর্তমানে রোজমেরি অয়েলের যে হেয়ার প্যাক বা মাস্কটা ব্যবহার করছেন সেটাই ব্যবহার করতে থাকুন।
খুব তাড়াতাড়ি অন্য প্যাক ব্যবহার করা শুরু করবেন না। তাছাড়া ব্যবহারের আগে জেনে নিন কোন উপাদানে আপনার অ্যালার্জি আছে কিনা।
সতর্কতা
- রোজমেরি অয়েল কখনোই খালি ব্যবহার করবেন না। এর সাথে অন্য একটি তেল বা ক্যারিয়ার তেল অবশ্যই ব্যবহার করবেন।
- প্রয়োজনের চাইতে বেশি রোজমেরি অয়েল ব্যবহার করলে মাথার ত্বকে যন্ত্রণা হতে পারে, যেমন চুলকানি বা জ্বালা করা ইত্যাদি।
- গর্ভবতী বা বুকের দুধ পান করাচ্ছেন এমন মহিলাদের রোজমেরি অয়েল ব্যবহার না করাই ভাল। উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে এই তেল বিপজ্জনক কারণ এটা রক্তচাপ আরো বাড়িয়ে তুলবে।
- সঠিক ব্যবহারবিধি জানার জন্য অ্যারোমাথেরাপিস্ট বা অন্য কোন যোগ্য ব্যক্তির পরামর্শ নিন।
- এই তেল চোখে গেলে চোখে জ্বালা করতে পারে। চোখে যদি তেল চলে যায় তাহলে সাথে সাথে ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
- ব্যবহারের আগে হালকা গরম না করলে তেলের কার্যকারিতা সম্পূর্ণ হবে না।