সিরাম হলো লাইটওয়েট তেল বা পানিজাতীয় লিকুইড যা ত্বকের গভীরে ঢুকে পুষ্টি জোগাতে এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।
এটি একটি উচ্চ ঘনত্ব বিশিষ্ট শক্তিশালী উপাদান
যা খুব কম সময়ে ত্বকের গভীরে পৌঁছায় এবং দ্রুত ত্বকের যাবতীয় সমস্যাগুলোর সমাধান করে।
এটি ত্বকের বলিরেখা, দাগ ছোপ, আনইভেন স্কিন টোন, বড় হয়ে যাওয়া লোমকূপ এর মতো নানা রকম সমস্যাগুলোকে টার্গেট করে এর সমাধান করে।
সিরাম যেভাবে কাজ করে
সিরাম স্পেশালি বানানো হয় ভিন্ন ভিন্ন ত্বকের ভিন্ন ভিন্ন চাহিদার ওপর ভিত্তি করে।
এতে বিভিন্ন অ্যাক্টিভ উপাদান থাকে যা স্পেসিফিক সমস্যাগুলো টার্গেট করে এর সমাধান করে।
সিরাম-এর উপকারিতা
ত্বকের সমস্যা অনুযায়ী সিরাম-এরও ভিন্নতা রয়েছে।
তাই নির্দিষ্টি সমস্যার জন্য নির্দিষ্ট সিরাম ব্যবহার করতে হবে।
এখানে বিভিন্ন সিরামের বিভিন্ন উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে। সিরাম ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকে যেমন বয়সের ছাপ, ফাইল লাইন, রিংকেল দ্রুত দেখা দেয় তেমনি তৈলাক্ত ত্বকে অতি দ্রুত ব্রণ এবং পোরস এর মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়।
এই সমস্যাগুলো দূর করতে সাহায্য করে ফেসিয়াল সিরাম। এছাড়াও এটি এন্টি এজিং হিসেবে কাজ করে।
ত্বকের দাগ এবং ট্যান দূর করে। ত্বকের সজীবতা বাড়ায়। ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস দূর করতে সাহায্য করে।
চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল বা ফোলা ভাব কমাতে আই সিরাম ভালো কাজ করে।
ত্বককে হাইড্রেট রাখতে এমনকি ডিহাইড্রেশন এর হাত থেকে রক্ষা করে সিরাম।
এতে থাকা সিরামাইড স্কিন ব্যারিয়ার রিপেয়ার করতে এবং স্কিন হাইড্রেট করতে সাহায্য করে।
ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি স্কিনের এক্সফোলিয়েশন ঘটিয়ে তার আর্দ্রতার দিকটিরও সযত্নে খেয়াল রাখে।
মেছতা, হাইপারপিগমেন্টেশন এর মতো সমস্যা দূর করে।
ত্বকের সফটনেস এবং মসৃণতা বাড়ায়। স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড রাখে। সিরামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধুলাবালি, রোদ এবং দূষণ থেকে আপনার স্কিন কে বাঁচাবে।
এক কথায় আপনার ত্বকের ড্যামেজ প্রতিরোধ করবে।
সঠিক সিরাম বাছাই করার গুরুত্ব
সিরামে সাধারণত অ্যাক্টিভ উপাদান থাকে যার ভুল ব্যবহার এর কারণে আপনার ত্বকে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
ফেসিয়াল সিরাম ত্বকের ভিন্ন ভিন্ন এরিয়া কে টার্গেট করে এবং এতে থাকা অ্যাক্টিভ উপাদানের উপর নির্ভর করে এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে।
এক-একটি সিরাম ত্বকের এক-একটি নির্দিষ্ট সমস্যার পিছনে কাজ করে।
তাই ফেসিয়াল সিরাম বেছে নেওয়ার পূর্বে কিছু জিনিস প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
প্রথমত আপনার ত্বকের সমস্যা গুলো চিহ্নিত করতে হবে। আপনার ত্বকের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন, যে এতে কিসের অভাব রয়েছে এবং কি প্রয়োজন।
এরপর সেই প্রয়োজনীয় অনুযায়ী কোন উপাদানটি আপনার সমস্যার সমাধান দিতে পারবে সেটি নির্ধারণ করুন।
সিরাম কি ময়েশ্চারাইজার এর কাজ করে
এর উত্তর হ্যাঁ এবং না, দুটোই।
সিরাম ত্বকের বাহিরে একটি লেয়ার তৈরী করে ত্বকের বাহিরে ময়েশ্চার চলে যাওয়া আটকায় এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যাকে টার্গেট করে তা দূর করতে সাহায্য করে।
আর ময়েশ্চারাইজার স্কিনকে ভিতর থেকে ময়েশ্চারাইজ করার পাশাপাশি ত্বকের সমস্যা দূর করে ত্বককে স্বাভাবিক করে তুলে৷
কিছু কিছু ময়েশ্চারাইজার শুধু ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করা ছাড়া আর কোন কাজ করে না।
তাই সিরাম আর ময়েশ্চারাইজার দুটো আলাদা জিনিস।
সব ক্রিম ময়েশ্চারাইজ এর কাজ করে কিন্তু সব সিরাম ময়েশ্চারাইজ এর কাজ করে না।
আর এ দুটোই ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এটা পরিষ্কার যে সিরামের বিকল্প ময়েশ্চারাইজার হতে পারে না৷
সিরাম কিভাবে স্কিন কেয়ার রুটিনে এড করবেন
সিরাম মূলত ফেইসওয়াশ বা ক্লিনজার, টোনার-এর পর এবং ময়েশ্চারাইজার, সানস্ক্রিন এর আগে ব্যবহার করতে হয়।
প্রথমে আপনার পছন্দের ফেসওয়াশ বা ক্লিনজার দিয়ে মুখটা ভালো করে ধুয়ে নিন। এরপর আপনার পছন্দমত টোনার ব্যবহার করুন।
টোনার ব্যবহার করার পর পরিষ্কার হাতে ২-৩ ফোটার মত ফেসিয়াল সিরাম নিয়ে পুরো মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন।
তারপর আপনার পছন্দের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। দিনের বেলা একই নিয়মে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার পর সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
রাতের বেলা ডাবল ক্লিনজিং করতে ভুলবেন না।
আপনি যদি প্রথম ফেসিয়াল সিরাম ব্যবহার করে থাকেন তাহলে শুরুতে প্রথম এক মাস সপ্তাহে দুদিন সিরাম ব্যবহার করবেন।
যদি আপনাকে সিরামটি স্যুট করে তাহলে পরের মাস থেকে সপ্তাহে ৩-৪ ব্যবহার করতে পারেন।
সিরাম ব্যবহারে বিগেইনারদের ক্ষেত্রে কম পার্সেন্টেজে থেকে ব্যবহার করা শুরু করতে হবে।
যেমন – নায়াসিনামাইড ৫%, ভিটামিন সি ৩% এরকম বা এর কম থেকে। এরপর ধীরে ধীরে এর মাএা বাড়াতে পারবেন।
কারণ সেনসিটিভ স্কিনে প্রথমেই বেশি পার্সেন্টেজে ব্যবহার করলে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সিরাম ব্যবহারে কিছু সর্তকতা
বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন মেইনটেইম না করে সরাসরি সিরাম ব্যবহার করা যাবে না। সিরাম ব্যবহার করলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
এটা কোনভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। দিনে সানস্ক্রিন ২ বা ৩ ঘন্টা রিএপ্লাই করতে হবে।
এন্টি-এজিং রেটিনল সিরাম ২৫ বছরের কম বয়সে ব্যবহার করা উচিত না।
একসাথে দুটি সিরাম ব্যবহার করলে যেটার ঘনত্ব কম সেটা আগে ব্যবহার করতে হবে।
ফাংগাল একনে থাকলে সিরাম কেনার আগে সেটি ফাংগাল একনে সেইফ কিনা তা চেক করে নিতে হবে।
সিরাম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩-৪ মাস বেসিক স্কিন কেয়ার করতে হবে।