ত্বকের ক্যান্সার হলো ত্বকে হওয়া একধরনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমার।
অথবা সহজ কথায় বলা যায়, ত্বকের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিই হলো ত্বকের ক্যান্সার।
শরীরের বিভিন্ন খোলা অংশে যেমন মুখ, গলা, হাত, পা, পিঠ ইত্যাদিতে এ ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সব ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার হার বেশি।
ধরনের উপর ভিত্তি করে ত্বকের ক্যান্সারকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।
যেমন, বেসাল সেল কার্সিনোমা (BCC), স্কোয়ামাশ সেল কার্সিনোমা (SCC), ম্যালানোমা ইত্যাদি। এর মধ্যে BCC সাধারণ ও সবচেয়ে বেশি হতে দেখা যায়।
শরীরের খোলা অংশগুলোতে এ ক্যান্সার বেশি হয়ে থাকে।
SCC অনেকটা BCC এর মত এবং এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুখগহ্বরের ভেতরে, ঠোঁটে, গোপনাঙ্গের কাছাকাছি ইত্যাদি স্থানে হয়ে থাকে।
আর ম্যালানোমা হয়ে থাকে আঁচিল থেকে। এটি সবচেয়ে মারাত্মক অবস্থা।
ত্বকের ক্যান্সার কেন হয়?
সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মিকেই ত্বকের ক্যান্সারের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
অর্থাৎ দীর্ঘ সময় ধরে প্রখর সূর্যতাপে কোন প্রোটেকশন ছাড়া অবস্থান করলে ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
তবে এটি ছাড়াও আরও কিছু ফ্যাক্টর এ ক্ষেত্রে কাজ করে। যেমন-বংশগত কারণেও এ রোগ হতে পারে।
কোনরূপ রেডিয়েশন এর কাছাকাছি বেশিক্ষণ অবস্থান করলে, যেমন কারও যদি চিকিৎসাজনিত কারণে খুব বেশি এক্সরে করাতে হয় (যদিও এক্সরে এর কারণে ত্বকের ক্যান্সার হতে অনেক বছর সময় লাগে)।
এমন কোন রোগে আক্রান্ত হওয়া যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় যেমন- Lymphomia, HIV ইত্যাদি।
মারাত্মকভাবে পুড়ে যাওয়া শরীরের কোন স্থান বেশিক্ষণ যাবৎ সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির মধ্যে থাকলে।
ধূমপানের কারণে এবং
আর্সেনিকের কারণেও ত্বকের ক্যান্সার হতে পারে।
ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়
ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান উপায় সম্পর্কে সব বিশেষজ্ঞই যেটি বলে থাকেন তা হলো সরাসরি সূর্যতাপ এড়িয়ে চলা এবং বাইরে বের হবার সময় সানস্ক্রিন লোশন, ক্রিম বা পাউডার ব্যবহার করা।
সঠিক মাত্রার SPF (Sun Protection Factor) সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন লোশন, ক্রিম বা পাউডার ব্যবহার করাই এটি রোধের সববচেয়ে কার্যকরী সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি এড়িয়ে চলার জন্য সকাল ৯টা থেকে ৫টা এ সময়টা বাইরে বের হওয়াটা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে পারলেই ভালো হয়।
আর যদি বের হতেই হয় তাহলে সানস্ক্রিন লাগিয়ে বের হতে হবে এবং প্রতি ২-৩ ঘন্টা অন্তর এটি বার বার লাগাতে হবে।
৯-২৫ বছর বয়সীদেরকে অতিবেগুনী রশ্মি এড়িয়ে চলতে বিশেষজ্ঞরা বিশেষভাবে পরামর্শ দেন।
তাছাড়া বাইরে বের হওয়ার সময় বড় হাতার জামা, সানগ্লাস, স্কার্ফ বা হ্যাট বা ছাতা নিয়ে বের হওয়া যায় যাতে করে সরাসরি সূর্যরশ্মি এড়িয়ে চলা যায়।
ধূমপান বা তামাক দ্রব্য সেবনও এ ধরনের ক্যান্সারের জন্য যেহেতু দায়ী তাই এসব অভ্যাস পরিত্যাগ করারও যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত।
ত্বক সুস্থ রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে হবে খাবার বা ভিটামিন সাপ্লিমেন্টারির মাধ্যমে ।
শরীরে নতুন নতুন তিল বা আঁচিল দেখা দিলে বা ত্বকের কোন অংশে কোন অস্বাভাবিকতা চোখে পড়লে অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।h
সর্বোপরি, ত্বকের ক্যান্সারের জন্য দায়ী বিভিন্ন কারণ ও এর লক্ষণগুলো জেনে সর্বোচ্চ সচেতনতা বজায় রাখলে এটি অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।