৪০ একটি গুরুত্বপূর্ণ বয়স। এ সময় হরমোনের বিভিন্ন পরিবর্তন হয়।
আর বয়স বাড়তে থাকলে ত্বকে হতে থাকে নানা সমস্যা।
বলিরেখা পড়া, ত্বকের মলিনভাব, সিস্টিক অ্যাকনে ইত্যাদি হয়। চল্লিশের পরে নারীদের ত্বকে কী কী সমস্যা হয়?
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের বিশেষ বিশেষ কিছু সমস্যা বাড়ে-কমে। আসুন জেনে নেয়া যাক।
চল্লিশোর্ধ নারীদের ত্বকের বেলায় প্রচলিত সমস্যাগুলো কী?
আগে যেমন মনে করা হতো কুড়িতে বুড়ি। এখন তো আর সেটি মনে করা হয় না।
চল্লিশোর্ধ যারা তারা কিন্তু বয়ঃসন্ধিদের কাছাকাছিই থাকে। যারা নিজেকে ব্যবস্থাপনা করে তারা থাকে।
আবার গ্রামেগঞ্জে এখনো অনেকে বাল্যবিবাহের মধ্য দিয়ে যান।
অনেক সময় ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সে একেবারেই বয়স্ক মনে হয় তাঁদের।
অনেকে মনে করেন, এত দিন তো খেয়াল করিনি। এখন তো ত্বকের একটু যত্ন নেওয়া জরুরি।
এই বয়সে ত্বকের যে সমস্যাটা বেশি হয়
আসলে ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে সাধারণত মেছতাটা বেশি হয়।
বা বিভিন্ন জায়গায় ছোপ ছোপ দাগ হয়। ব্রণ কিন্তু এ বয়সে কিছুটা কমে যায়।
তবে এই বয়সে একটি বিশেষ ব্রণ হয়। সেটি ভয়াবহ ফোঁড়া ধরনের।
এগুলো হলো, সিস্টিক অ্যাকনে, নডিউলসিস। এগুলো আবার এ বয়সে বেশি হয়।
এই বয়সে বেশি হয় আরেকটি ত্বকের রোগ।
আর এটি হলো, কনটাক্ট ডার্মাটাইটিস।
বা রেলস মেলানোসিস নামে একটি রোগ রয়েছে সেটিও হয়।
বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করার প্রভাবটা পড়ে
প্রসাধনী ব্যবহার করার পড়ে সমস্যাটা শুরু হয়। যেমন: ব্রাইটেনিং ক্রিম বা ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম।
ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহার করে শুরুতে খুব ফর্সা হয়, তখন তো আমাদের কাছে আসে না।
যখন প্রভাবটা চলে যায়, তখন ছোপ ছোপ দাগ নিয়ে আসে।
এটি খুবই খারাপ একটি সমস্যা। এটি মোকাবিল করতে আমরা হিমশিম খাই।
যখন চল্লিশের কাছাকাছি হয়, তখন তাদের মনে হয়, এখন তো বয়স ধরে রাখতে হবে।
কিন্তু তখন কিন্তু ত্বকে কিছু ক্ষতি হয়ে যায়। বিভিন্ন উল্টোপাল্টা প্রসাধনী ব্যবহার করার জন্য এমনটা হয়।
যে কারণে আমরা এই বয়সে বাড়তি যত্ন নিতে বলি
এ সময় কিন্তু হরমোনের পরিবর্তন হয়। পাশাপাশি মানসিক চাপ বাড়ে।
যেই মেয়েটা ২০ বছরে ছিল, সে বাবার সংসারে ছিল, তার নিজের কোনো চিন্তাই ছিল না।
সে যখন পারিবারিক জীবন শুরু করে, বাচ্চা-কাচ্চা হয়, স্বামী ও পরিবার নিয়ে প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে থাকে।
তখন কিন্তু এই চাপটা তার ত্বকের মধ্যে ফুটে ওঠে। যেমন ত্বক একদম মলিন হয়ে যায়, বলিরেখা পড়তে থাকে।
বিভিন্ন রকম দাগ হয়। চুল পড়ে যেতে থাকে। এটি তখন মেনে নেওয়া খুব কঠিন হয়ে যায়।
চল্লিশ এর কোঠায় ত্বকের দেখাশোনা
৪০ বছর বয়সে আমাদের ত্বকে বার্ধক্য যেন একেবারে চেপে বসে।
ফলে ত্বক কুঁচকে যাওয়ার সমস্যা আরও বেড়ে যায়। এসময় ত্বকে কোলাজেনের উৎপাদন কমে যায় অনেকটাই।
ফলে ত্বক শুষ্ক এবং বলিরেখায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই কারণেই এই সময় ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হয়।
যাতে প্রয়োজনীয় কোলাজেন তৈরি হতে পারে। তবে এই সময় ত্বকের যত্ন করাটাও খুব জরুরি।
অ্যালোভেরা এবং কাঠ বাদাম হল এমন দুটি উপাদান, যা ত্বককে সুস্থ রাখতে এবং বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে।
অ্যালোভেরা এবং কাঠ বাদাম প্যাক
কাঠ বাদামে প্রচুর পরিমাণে তেল মজুত থাকার ফলে এর ব্যবহারে ত্বকে বয়সের চাপ সহজে পড়ে না।
আর অ্যালোভেরা ত্বকের বলিরেখা কমিয়ে ত্বককে আরও নরম এবং মজবুত করে তোলে।
উপাদান
৪-৫ টি কাঠ বাদাম সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। অ্যালোভেরার ১ টি তাজা পাতা।
পদ্ধতি
কাঠবাদামগুলো ভাল করে বেঁটে নিন।
এরপর অ্যালোভেরা পাতাটা কেটে ভেতর থেকে জেলটা বের করে নিতে হবে।
অ্যালোভেরা জেল এবং কাঠ বাদাম মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে।
এরপর পেস্টটা মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে ২০ মিনিট।
সময় শেষ হয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখটা ধুয়ে নিতে হবে।
চল্লিশোর্ধ নারীদের জন্য কিছু জরুরি পরামর্শ
- ত্বক ভালো রাখার প্রথম পদক্ষেপ হল একটি রুটিন মেনে চলুন। ৪০ পার হওয়ার পর থেকেই ত্বক শুষ্ক হতে থাকে এবং বলিরেখা দেখা দেয়। উন্নত ময়েশ্চারাইজার ও অ্যান্টি এইজিং সিরাম ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- আর্দ্রতাযুক্ত ফাউন্ডেশন চল্লিশোর্ধ ত্বকের জন্য ভালো কাজ করে। কেননা এই সময় ত্বক পাতলা ও নির্জীব হতে থাকে।
- এই আর্দ্রতাযুক্ত ফাউন্ডেশন ত্বকের স্বাভাবিক রং ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করে। তরল ফর্মুলা ত্বকের জন্য সবসময় ভালো কাজ দেয়। কারণ এটা বলিরেখা ঢাকতে সহায়ক। উষ্ণ বর্ণ ও হলুদ রং ত্বকের ভারসাম্য রক্ষা করে।
- চল্লিশের ওপর বয়স যাদের তাদের পিচ বা গোলাপি রংয়ের ব্লাশ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ এতে তাদের ত্বকের স্বাভাবিক রং বজায় থাকে এবং গালে প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যোজ্জ্বলভাব ফুটে ওঠে।
- উষ্ণ বর্ণের আই শ্যাডো ব্যবহার করলে চোখ দেখাবে বড়। শুষ্ক বাদামি বা প্রাকৃতিক যে কোনো রংয়ের আই শ্যাডো ব্যবহার করা যায়। কাজল বা জেল আইলাইনারের সঙ্গে মাশকারা ব্যবহার স্নিগ্ধ ভাব দিতে সহায়ক।
- বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁট চিকন ও শুষ্ক হতে থাকে। তাই ভরাট ঠোঁট পেতে লিপ লাইনার ব্যবহার করুন। ঠোঁটের বাইরের অংশে ম্যাট লিপ্সটিক ও ভিতরের অংশে গ্লস ব্যবহার করুন। এতে ঠোঁটে পুরুভাব থাকবে। ত্বক ভেদে হালকা বা গাঢ় শেইড বেছে নিন।