Search
Close this search box.

অনিদ্রার কারণ ও তার প্রতিকার

আমাদের জন্য ঘুম একটু অত্যাবশক জিনিস।

একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে দৈনিক ৬/৭ ঘন্টা ঘুম আবশ্যক। 

কিন্তু বাচ্চা বা প্র‍্যাগনেন্ট মহিলা দের ক্ষেত্রে সেটা একটি বেশি হবে। 

অন্য দিকে বয়স্কদের ঘুম ৪/৫ ঘন্টাই যথেষ্ট। 

কিন্তু ঘুম নিয়মিত না হলে সেটা আমাদের মানসিক ও বাহ্যিক কাজের উপর খুব প্রভাব ফেলে যা খুবই চিন্তার বিষয়। 

বিভিন্ন কারণে এমন অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

অনিদ্রার লক্ষণ 

১. ঠিক মতো ঘুম না আসা।

২. বিছানায় শোয়ার পর ও হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া। 

৩. তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া। 

৫. সারাদিন মানসিক অবসাদ অনুভব করা, ইত্যাদি। 

ঘুম না হলে কী হবে?

এটা খুব চিন্তার বিষয় যে বিছানার শোয়ার পর ও আমাদের ঘুম আসছে না।

এটা অস্বাভাবিক বিষয়। আমরা যদি ঠিক মত না ঘুমাই অবশ্যই পরে আমাদের ক্লান্ত লাগবে।

একদিন বা দুইদিন এটা সমস্যা করবে না কিন্তু টানা এমন হতে থাকলে সেটা মানসিক ও শারিরীক দুটোর জন্যেই ক্ষতিকর।

বেশ কয়েক রাত ঘুম না হলে যে লক্ষণগুলো দেখা যাবে

১. সবসময় অবসাদ বা ক্লান্ত লাগছে খুব

২. দিনের বেলা চোখ ঘুমে জড়িয়ে যাচ্ছে

৩. কাজে ঠিকমতো মতবে  মনোযোগ দেয়া যাচ্ছে না

৪. অনেক সিরিয়াস ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হচ্ছে

৫.মন খারাপ লাগছে

৬. শরীর ভেঙে পরছে 

৭. মেজাজ খিটখিট হয়ে থাকা

৮. মাথা-ব্যথা, শরীরে-ব্যথা, গ্যাসের সমস্যা ইত্যাদি।

ঘুমের ২ ধরণের সমস্যা 

সাধারণত ২ ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে ঘুমের।

একটি হচ্ছে ইনসোমনিয়া ও আরেকটা হাইপার সোমনিয়া। 

হাইপারসমনিয়া হলো যারা অতিরিক্ত ঘুমায়।

এমন হয় যে তারা ১০/১২ ঘন্টা ঘুমানোর পর ও অবসাদ অনুভব করে।

তাদের কাজের মধ্যেও ঘুম ঘুম আসতে থাকে। এটা হাইপার সোমনিয়ার লক্ষণ। 

ইনসমনিয়া হচ্ছে যাদের ঘুম কম হয়।

বিছানায় শোয়ার পর ও এপাশ ওপাশ করতে থাকে কিন্তু ঘুম আসে না।

অথবা বলা যায় ৫/৭ ঘন্টা হওয়ার আগেই ঘুম ভেঙে যায়। 

বর্তমান সময়ে ঘুমের সমস্যা একটি খুবই পরিচিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমাদের দেশ ও অন্যান্য দেশের মানুষের মধ্যে এইটা ঘুম দেখা দিয়েছে।

বাস্তবে ঘুমের বিভিন্ন অসুখের কারনে মানুষের ঘুম বাধাগ্রস্থ হতে পারে। 

ইনসমনিয়া বা ঘুম না আসার কারণ

ইনসমনিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় এবং তা হলো প্রাইমারি ইনসমনিয়া এবং সেকেন্ডারি ইনসমনিয়া।

প্রাইমারি ইনসমনিয়া

ঘুমের সমস্যা হওয়ার পিছনে অন্য কোন শারীরিক সমস্যা দায়ী না থাকলে সেটাকে প্রাইমারি ইনসমনিয়া বলা হয়। যেমনঃ

প্রচন্ড মানসিক চাপ

এই সমস্যাটি নানা কারণে হতে পারে। 

পরিবারের কারও বিচ্ছেদ হলে আত্মীয়স্বজন কেউ মারা গেলে সে মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে থাকে।

আবার সেটি কোন ভাবে তার চাকরির জন্য হতে পারে বা আরো নানাম সমস্যা। 

আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশের অভাব 

ঘুমের সময় যদি ঘর বেশি গরম বা ঠাণ্ডা থাকে সে ক্ষেত্রে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। রুমে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের সমস্যার কারণেও ঘুমের সমস্যা হতে পারে।  

ঔষধ সেবন 

ওষুধ সেবনের কারণে ঘুম কম বেশি হতে পারে যার কারণে ইনসোমনিয়া দেখা দেয়। 

অনিয়মিত রুটিন 

আমাদের ঘুমের অনিয়মিত রুটিন বা এর সময়সূচির পরিবর্তন আমাদের ঘুমের প্রচন্ড ব্যাঘাত ঘটায়।

কখনো ১১ টায়, কিংবা ১২ টায় এমন করে সময় পরিবর্তন করে ঘুমালে তা পরবর্তীতে আমাদের ঘুমের উপর প্রভাব ফেলবে। 

হার্ড ড্রিংকস বা কফি সেবন করা

চা, কফি বা মদ্যপান এর কারণে আমাদের ঘুমে খুব প্রভাব ফেলতে পারে। এসব খাওয়ার ফলে আমাদের অনিদ্রা দেখা দিবে। 

সেকেন্ডারি ইনসমনিয়া

এই সমস্যা টি হতে পারে যেকোন শারীরিক সমস্যার কারণে।

যেমনঃ গ্যাস্ট্রিক, শ্বাসকষ্ট, বিষণ্নতা, ক্যান্সার, বুক জ্বলা, ইত্যাদি।

আবার কোন বিশেষ ঔষধ খাওয়ার কারণেও ঘুম না আসতে পারে।

যারা এলকোহল বা ড্রাগ এডিক্টর তাদের এই রোগ কে সেকেন্ডারি ইনসমনিয়া বলা হয়।

চিকিৎসা 

ইনসোমনিয়া কে কত দিন স্থায়ী হয় এবং কত ঘন ঘন হয়, তার উপরে নির্ভর করে এটাকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। 

যেটা অল্প দিন স্থায়ী থাকে সেটাকে একিউট ইনসোমনিয়া আর দীর্ঘদিন স্থায়ী থাকলে সেটাকে ক্রনিক ইনসোমনিয়া বলা হয়।

একিউট ইনসোমনিয়ার জন্য সাধারণত চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। 

আমরা যদি একটু নিয়ম মেনে ভালো ঘুমের অভ্যাস করতে পারি তাহলে এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব। 

কিন্তু ক্রনিক ইনসোমনিয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া হতে পারে।

কারণ এই ইমসমমিয়া দীর্ঘস্থায়ী আর এটার প্রভাব আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুব পরে।

আপনার দিনের বেলা ঘুম ঘুম ভাব এবং ক্লান্তি লেগে থাকে।

তাই ডাক্তার আপনাকে অল্প কয়েকদিন জন্য ঘুমের ঔষধ খেতে বলতে পারেন। 

‘কগ্নিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি’ নামক একধরনের চিকিৎসা অনিদ্রাতে কাজ করে বলে প্রমানিত হয়েছে।

এতে যে চিন্তা আপনাকে বেশি ভাবিয়ে তুলছে এবং আপনার ঘুমের ব্যাঘাত করছে তার মোকাবিলা করতে শেখায় আর যেসব ব্যবহারে ঘুম ভালো হয় সেগুলো ও শেখানো হয়। 

প্রতিরোধ

আপনার কিছু ভালো অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা প্রতিরোধ করা সম্ভব। 

আপনি এটি প্রতিরোধে যা যা কর‍তে পারেন

১. আপনার ঘুমানোর সময় বা শিডিউল ফিক্স করুন। একটি রুটিন মেনে ঘুমাতে যান ও ঘুম থেকে উঠুন।  

২. ঘুমানোর এক ঘন্টা আগ থেকে মন কে শান্ত ও রিল্যাক্স করুন। ঘুমানোর সময় যাতে কোনো চিন্তা মাথায় না আসে তাই সেইগুলো ১ ঘন্টা আগেই ভেনে গুছিয়ে নিন তারপর ঘুমাতে যান। 

৩. ঘুমানোর আগে একটি আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন। না গরম, না ঠান্ডা। নরমাল টেম্পারেচার এ রাখুন তাতে করে ঘুম ভালো আসবে। 

৪. ঘুমাত্ব যাওয়ার আগে কোনো রকম ফোন, টেলিভিশন, ল্যাপ্টপ ইত্যাদি ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকুন। নয়তো সেইসব চিন্তা মাথায় এসে আপনার ঘুম নষ্ট করবে। 

৫. যেকোনো ধরণের ভাড়ি খাবার ও ক্যাফেইনযুক্ত খাবার পরিহার করুন। এসব খাবার খেলে ঘুম আসে না ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। 

৬. নিয়মিত বিভিন্ন এক্সারসাইজ বা শরীরচর্চা করুন। এতে করে শরীর ক্লান্ত হবে ও ঘুম আসবে তাড়াতাড়ি। গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে পাঁচ দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করা হলে ঘুমের মান উন্নত হয়। 

৭. দিনের বেলা ঘুমালে রাতের ঘুমের চাহিদা কমে যায়। তাই রাতে জেগে থাকতে হয়। তাই দিনের বেলা না ঘুমানোর চেষ্টা করুন। 

৮. অতিরিক্ত শব্দ বা আলো রুমে থাকার কারণেই ঠিকমতো ঘুম আসে না। তাই অন্ধকার করে ও কোনো রকম শব্দ না হয় সেটা খেয়াল রেখে ঘুমানো যাওয়া উচিৎ।  এতে করে ঘুম ও হবে আর মাঝে ঘুম ভাঙার সম্ভাবনাও থাকে না। 

৯. বিছানায় শোয়ার পর যদি ঘুম না আসে, তবে এই রুমে লাইট অফ রেখেই পাশের রুম বা অন্য পরিবেশে গিয়ে আপনি গান শুনতে পারেন, গল্প করতে পারেন তারপর রিল্যাক্স হয়ে আগের জায়গায় ফিরে এসে ঘুমিয়ে পরুন। 

১০. আপনার ঘুমানোর বিভিন্ন পজিশনের উপর নজর দিন। কোন পজিশনে ঘুমাতে আপনি বেশ আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করুন সেই ভাবেই ঘুমানোর চেষ্টা করুন। 

সুস্থ জীবন খুব সহজেই অর্জন করে নেয়া যায় শুধু মাত্র একটু নিয়মমাফিক কাজ করেই। পর্যাপ্ত ঘুম ও ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করলেই ইনসমনিয়া সহ নানা রোগ থেকে সুস্থ থাকা সম্ভব।