অনেকেই চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে ভালোবাসেন। কিন্তু জানেন কি চিনি শরীরের জন্য কতটা বিপজ্জনক?
চিনি খাওয়ার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অসংক্রামক ব্যাধি যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ার সরাসরি সম্ভাবনা তৈরি করে।
অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের ফলে শরীরে দেখা দিতে পারে নানা রকম বিষক্রিয়া।
এছাড়াও সব ধরনের বিপাকজনিত রোগ, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের আধিক্য, ফ্যাটি লিভার, ডায়াবেটিস, মেদস্থূলতা ও বার্ধক্য প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হওয়ার সঙ্গে চিনির সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
এসব কারণেই বিশ্বজুড়ে এখন চিনির আরেক নাম ‘হোয়াইট পয়জন’।
চিনি খাওয়ার ফলে দীর্ঘমেয়াদি যেসব রোগ হয়ে থাকে তা খুব ধীরে ঘটায় তাৎক্ষণিকভাবে টের পাওয়া যায় না বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের ফলে শতকরা ৪০ জনের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, করোনারি হৃদরোগ, উচ্চ কোলেস্টেরল ও লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, চিনিতে থাকা ফ্রুক্টোজ যকৃতে বিষক্রিয়া ও নানারকম দীর্ঘমেয়াদি রোগের কারণ।
এভাবে অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।
প্রদাহ বৃদ্ধি
চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাধারণ তথ্য হলো- মিষ্টি কিছু খেলেই শরীর ইন্সুলিন নিঃসরণ শুরু করে যা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থির রাখে।
তবে ইন্সুলিন নিঃসরণ শুরু হওয়া মাত্রই দেহে প্রদাহ তৈরি হয় যা থেকে ত্বক লালচে হয়ে যেতে পারে।
ব্রণ
অতিরিক্ত চিনির কারণে ব্রণ হয়। প্রথমে ত্বকে প্রদাহ তৈরি হয়।
সংক্রমণ রোধ করতে রক্তের শ্বেতকণিকা নিঃসরণ করে শরীর। যা ব্রণের অবস্থা আরও খারাপে দিকে নিয়ে যায়।
কোষকলায় আক্রমণ
মিষ্টি-জাতীয় খাবার শরীরে প্রবেশ করে কোষকলার প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হয়।
যাকে বলে গ্লাইকেশন। অর্থাৎ প্রোটিনের সঙ্গে চিনির বিক্রয়া ঘটে।
এই প্রক্রিয়া থেকে তৈরি হয় এজিইএস বা অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন এন্ড প্রোডাক্টস। যা কোষকলায় আক্রমণ করে।
ফলে বলিরেখা ও বয়সের বিরুদ্ধে কাজ করার ক্ষমতা ত্বকের কমে যায়।
অ্যালার্জি বাড়ায়
অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে চিনি সেটার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই যাদের এই সমস্যা আছে তাদের চিনি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
আর বিভিন্ন খাবার থেকে অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই খাবার গ্রহণের আগেই সাবধান হতে হবে।
লালচে মুখ
টুকটুকে লালচে মুখ দেখে খুশি হওয়ার কিছু নেই। বিশ্বের ত্বক বিশেষজ্ঞরা এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের অভ্যাসকে।
এই লালচে মুখকে বলা হচ্ছে ‘সুগারি ফেইস’। যা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক এবং এলকোহলের মতোই চিনিও আসক্তি সৃষ্টি করে।
চিনি যত খাওয়া হয়, তত এটি মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করে আরো খাওয়ার জন্যে।
চিনি খাওয়ার ফলে গ্রেলিন, লেপটিন, ডোপামিন ইত্যাদি হরমোনের স্বাভাবিক প্রবাহ-ছন্দ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়, যা মস্তিষ্কে ক্ষুধার অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়।
এবং আমরা অতিরিক্ত পরিমাণ খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে উঠি।
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের ফলে মানবদেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে ও বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
এসব কারণে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো- চিনির উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
ভোগ্যপণ্য হিসেবে চিনির ব্যবহার কমানোর ব্যাপারে বিশ্বজুড়ে সচেতনতা দিন দিন বাড়ছে।
অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার যেমন ফাস্টফুড, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কোমল পানীয় ও বোতলজাত জুসের ব্যাপারে শিশু-কিশোরদের নিরুৎসাহিত করে তুলতে উন্নত বিশ্বের অনেক স্কুল-কলেজ তাদের ক্যাফেটেরিয়ার ভেন্ডিং মেশিন থেকে এসব খাদ্যপণ্য সরিয়ে নিয়েছে।
তাই মাত্রাতিরিক্ত চিনি গ্রহণের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদের যথাযথ সচেতনতা জরুরি।