গরমে ঠিক কেমন পোশাক পরলে আমাদের আরাম লাগবে এটাই আমাদের মূল চিন্তা থাকে।
গরমে কেমন দেখতে লাগবে সেটা না ভেবে আমরা পোশাক পরি কেমন আরাম হবে সেটা মাথায় রেখে।
কিন্তু আরামের সঙ্গে তো দেখতে সুন্দর লাগার বিরোধ নেই।
তাই এমন পোশাক পরুন গরমে যা আরামও দেবে, সঙ্গে সুন্দর দেখতেও লাগবে।
পোশাক পরার আগে দেখে নিন সেই পোশাক কোন ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি, আর সেই পোশাকের রঙ কি।
এই দুই মূল জিনিসের উপরেই নির্ভর করে আপনার গরমের আরাম আর স্বাচ্ছন্দ্য।
ম্যাটেরিয়াল
প্রথমে আসি ম্যাটেরিয়াল প্রসঙ্গে।
এমন কিছু জিনিস আছে যেগুলি দিয়ে তৈরি পোশাক গরমে আপনাকে সবচেয়ে বেশি আরাম দেবে।
তাই চেষ্টা করুন সেই সব জিনিস দিয়ে তৈরি পোশাক পরার।
১. কটন বা সুতি
নিঃসন্দেহে কটন আপনাকে এই গরমে যে আরাম দেবে, সেই আরাম আর কোনও উপাদান দেবে না।
সুতি খুবই হাল্কা হয় আর সুতোর তৈরি বলে সুতির কাপড়ের মধ্যে দিয়ে সহজেই হাওয়া চলাচল করতে পারে।
তাই সুতির কাপড় আমাদের শরীর ভিতর থেকে ঠাণ্ডা রাখে।
সুতির শাড়ী পরার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষেরা যদি কটনের প্যান্ট পরেন তাহলে বেশ আরাম পাবেন।
এই গরমে জিন্সের বদলে তাই কটনের জিনিস পরুন।
২. খাদি
খাদি শুধু যে ভারতের নিজস্ব উপাদান, তার জন্য এর গুরুত্ব বেশি, তা নয়।
খাদি ম্যাটেরিয়াল হিসেবেও খুব ভালো।
কটনের মতোই আরামদায়ক হলো খাদি।
খাদি খুব সহজেই হ্যান্ডেল করা যায়।
আর খাদি খুব ভাল ভাবে হাওয়া সরবরাহ করে শরীরে।
খাদি খুব সহজে ঘাম শুষেও নেয়। ফলে শরীরে ঘাম বসে না।
আর খাদি এখন ফ্যাশনে ইন বলাই যায়। তাই গরমে খাদি খুব কার্যকর ম্যাটেরিয়াল।
৩. লন ক্লথ
এটি একটি হাল্কা ওজনের ফ্যাব্রিক।
বলা যায় এটা পরলে একটা বেবি সফট ফিলিং আসবে।
লন ক্লথ আসলে লাইনেন আর কটনের মিশ্রণে তৈরি হয়।
কটন আছে বলে এটা হাল্কা আর নরম।
আর যেহেতু এর টেক্সচার হাল্কা, তাই খুব গরমে এটা তাপ শুষে না নিয়ে বরং প্রতিফলিত করে।
তাই গরম কম লাগে।
৪. ফ্রেস্কো
ফ্রেস্কো ম্যাটেরিয়াল একটু ট্রান্সপারেন্ট ধরণের দেখতে, সঙ্গে খুব হাল্কা।
আপনার গরমের দিকে পার্টি থাকলে এই ফ্রেস্কোর তৈরি ড্রেস পরলে দারুণ লাগবে।
এতে করে আরামও পাবেন, সঙ্গে একটা ট্রেন্ডি লুক আসবে।
এই পোশাকের মধ্যেও হাওয়া চলাচলের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
৫. সারসাকার
এই ফেব্রিক এক্সক্লুসিভলি আপনার শরীর ঠাণ্ডা রাখে।
এই ম্যাটেরিয়াল ভিতর থেকেই খুব ঠাণ্ডা। আর এর ওজন বেশ হাল্কা।
মজার ব্যাপার হলো, এই মেটারিয়াল খুব হাল্কা, ঠাণ্ডা হলেও এর মধ্যে কিন্তু একটা সুদিং লুক আছে।
তাই গরমের জন্য পারফেক্ট বলাই যায়।
৬. রেয়ন
রেয়ন খুব অন্যরকমের একটা ফেব্রিক। এটা মানুষের তৈরি করা একটা ফেব্রিক।
কিছু নির্দিষ্ট উপাদান দিয়ে এই ফেব্রিক তৈরি করা হয়।
ভিজে কাঠের পাল্প, সেলুলোজ, কটনের মতো আরও কিছু ন্যাচারাল সিন্থেটিক একসঙ্গে মিশিয়ে এই রেয়ন তৈরি করা হয়।
আর আমরা যখন এটা তৈরি করেছি, তখন আরামের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করেছি।
এই গরমে তাই রেয়নের তৈরি পোশাক পরতেই পারেন। রেয়নের মধ্যে একটা ম্যাট ফিনিশ আছে, যেটা গরমের দিনে বেশ ভাল মানায়।
৭. লিনেন
ফ্ল্যাক্স প্ল্যান্ট থেকে তৈরি হওয়া একটি ন্যাচারাল ফেব্রিক।
খুবই আরামদায়ক টেক্সচারের হয় এটি।
সবচেয়ে বড় কথা, এটি হয় শুধুমাত্র সুদিং টেক্সচারের। সঙ্গে হাল্কা রঙের হয় এটি।
তাই লিনেন কিনলেই আরাম এই গরমে আপনাদের হাতের মুঠোয়।
রঙ
গরমে ম্যাটেরিয়াল-এর পাশাপাশি রংটাও কিন্তু একটা ব্যাপার।
আপনি কোন রঙের পোশাক পরছেন তার ওপর নির্ভর করছে আপনার গরম লাগবে না লাগবে না।
যদি আপনি ডিপ রঙের পোশাক পরেন, তাহলে সেই ডিপ রঙ সূর্যের আলো বেশি শুষে নেবে।
তাই আপনার গরম বেশি লাগবে।
সাদার মতো হাল্কা রঙ সূর্যের আলো কম টানবে আর আলো প্রতিফলিত করবে।
তাই শরীরে তাপ কম লাগবে।
এই বেসিক কথা মনে রেখেই গরমে পোশাক কেনা উচিত।
গরমে যে রঙ আরামদায়ক
- হাল্কার ওপর যে রঙ হয়, যেমন সাদা, হাল্কা সবুজ, হাল্কা বেগুনি, হলুদের নানান শেড খুবই ভাল এই গরমে পরার জন্য।
- বিশেষ করে সাদা আর হলুদ হল গরমের পারফেক্ট কালার। আগেই বলেছি এই রঙ সূর্যের আলো কম শুষে নেয়, বেশির ভাগ অংশ প্রতিফলিত করে। তাই শরীর ঠাণ্ডা থাকার পাশাপাশি এই রঙের পোশাক অনেক বেশি উজ্জ্বলও লাগে। তাই গরমে এই ধরণের রঙ ব্যবহার করুন।
গরমে যেসব রঙ পরবেন না
গরমে কালো একদম পরিত্যাজ্য।
হ্যাঁ, কালোর মতো এলিগ্যান্ট রঙ আর হয় না জানি।
কিন্তু কালো সবচেয়ে বেশি সূর্যের আলো বা এমনি তাপ শুষে নেয়।
তাই কালো, গাঢ় অন্য রঙ, যেমন নীল, ম্যাজেন্টা এই ধরণের রঙ বাদ দিন।
তবে, খাদির কালো রঙের ওপর বেশ কিছু শেড আছে যেগুলো কালো হলেও হাল্কা।
সেগুলি ট্রাই করতে পারেন।
এভাবে পোশাক নির্বাচন করলে আর গরমে পরলে যতই গরম পড়ুক, খুব একটা সমস্যা হবে না। আরামও থাকবে, সঙ্গে ফ্যাশনও।