সানস্ক্রিন ঠিকমত ব্যবহার না করার সাইড ইফেক্টগুলো সম্পর্কে জানেন কি?

আমরা গ্রীষ্মপ্রধান দেশে থাকি বলে গ্রীষ্মকালে আমাদের এখানে রোদের সমস্যা একটা ভয়াবহ আকার নেয়।

বেশি করে যখন সূর্য মধ্য আকাশে থাকে, অর্থাৎ দুপুরের দিকে।

যদিও আমরা এই রোদের আঁচ সকাল থেকেই পেটে থাকি। আর আমাদের তো সকালেই বের হতে হয়।

এই রোদ যেখানে সান স্ট্রোকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, সেখানে আমাদের ত্বকের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে তা তো আপনারা বুঝতেই পারছেন।

তাই সবও সময়ে বলা হয় সানস্ক্রিন মেখে বাইরে যেতে যাতে সান বার্ন বা স্কিন ক্যানসার না হয়, পিগমেনটেশন না হয়।

কিন্তু এই যে আমরা সানস্ক্রিন ব্যবহার করি, তা তো বেশির ভাগ সময়েই রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয়।

এতে থাকতে পারে টেট্রাসাইক্লাইনস, সালফা ড্রাগস, ফেনোথিয়াজাইনের মতো সমস্যা।

তাই আজ আপনাদের জানাবো এই সানস্ক্রিন ঠিকমত ব্যবহার না করলে ঠিক কী কী সমস্যা হয় আপনাদের।

ঠিক কীভাবে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হয়?

সানস্ক্রিন ব্যবহার করার কিছু নিয়ম আছে। যেমন-

১. ত্বকের যে যে অংশে রোদ পড়ছে সেই সেই অংশে ব্যবহার করুন সানস্ক্রিন।

২. রোদে বের হবার ৩০ মিনিট আগে ব্যবহার করুন সানস্ক্রিন।

৩. সুইমিং করলে বা ঘেমে গেলে সানস্ক্রিন আবার ব্যবহার করুন।

৪. যদি বাড়িতেও থাকেন, তাও ৪ ঘণ্টা অন্তর অন্তর সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

সানস্ক্রিন থেকে সাইড এফেক্ট

এবার আসুন জেনে নিই এই সানস্ক্রিন ঠিকমত ব্যবহার না করার ফলে কী কী অসুবিধে হতে পারে।

১. অ্যালার্জির সমস্যা

সানস্ক্রিনে কিছু কেমিক্যাল থাকে যা আমাদের ত্বক লাল করে দিতে পারে, চুলকানি বাড়িয়ে দিতে পারে।

অ্যালার্জি এই পর্যায়ে যেতে পারে যে আপনার হয়তো বড় বড় র্যাতশ তৈরি হল আর সঙ্গে খুব জ্বালা।

অনেক সময়ে সানস্ক্রিনে যে গন্ধ উপাদান বা প্রিসারভেটিভ দেওয়া থাকে তার জন্য এই সমস্যা হয়।

পি.এ.বি.এ নামের একটি রাসায়নিক উপাদান থাকে সানস্ক্রিনে যার জন্য বেশি এই সমস্যা হয়।

তাই অনেক নামী ব্র্যান্ড এই উপাদানটি বাদ দিয়ে দিয়েছেন এখন।

অনেক সময়ে সানস্ক্রিনে লেভেল থাকে ‘হাইপোঅ্যালার্জেনিক’।

আপনি সেটা দেখতে পারেন। বা যে সানস্ক্রিনে জিঙ্ক অক্সাইড থাকে সেই ধরণের সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন।

এতেও অ্যালার্জির সমস্যা কম হয়।

তাই ভালো ব্র্যান্ড এর সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

২. ব্রণ এর সমস্যা বাড়তে পারে

যদি আপনার ব্রণর সমস্যা থাকে তাহলে কিন্তু সানস্ক্রিনে থাকা রাসায়নিক সেই সমস্যা বাড়াতে পারে।

এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আপনি ব্যবহার করুন নন-কমেডোজেনিক আর নন-অয়েলি সানস্ক্রিন।

আর ত্বকে যে সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন তা মুখে ব্যবহার করবেন না, কারণ তা খুব ভারী হয়।

৩. চোখের সমস্যা

সানস্ক্রিন যদি কোনও ভাবে চোখে যায় তাহলে তার থেকে চোখ জ্বালা হতে পারে।

আলোর দিকে তাকাতে খানিক সমস্যাও হতে পারে। অনেকে তো এটাও বলেন যে সানস্ক্রিনে থাকা রাসায়নিক উপাদান চোখ অন্ধ করেও দিতে পারে।

যদি চোখের সংস্পর্শে কোনও ভাবে সানস্ক্রিন যায়, তাহলে ঠাণ্ডা জল দিয়ে চোখ ধুয়ে নিন, আর ডাক্তার দেখান।

৪. ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ায়

সানস্ক্রিনে থাকা উপাদান অনেক সময়ে ব্রেস্ট ক্যানসার সেলে ইস্ট্রোজেনিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

ব্লাড ইস্ট্রোজেন লেভেলের উপরেও প্রভাব ফেলে এই সব উপাদান।

তাই ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা একদমই ঠিক নয়, কারণ তাদের ত্বক খুব তাড়াতাড়ি সানস্ক্রিন শুষে নেয়।

৫. লোম আছে এমন জায়গার সমস্যা হতে পারে

সানস্ক্রিন নানা ধরণের হয়, যেমন জেল, লোশন, স্প্রে, ক্রিম ইত্যাদি আকারে।

আপনার পছন্দ আর ব্যবহারের সুবিধে মতো আপনাকে বেছে নিতে হবে।

তবে জেল ব্যবহার করাই সাধারণত ভালো, কারণ এটি নন-স্টিকি হয়।

বিশেষ করে ছেলেদের বুকে ব্যবহারের জন্য কারণ সেখানে লোম থাকে।

জেল ব্যবহার না করলে এই লোমে সানস্ক্রিন শুকিয়ে যায় আর তার ফলে লোমে টান পড়ে। তখন ব্যথা হয়।

৬. হেয়ার ফলিকলের ক্ষতি করতে পারে

মুখে আমরা যে সানস্ক্রিন ব্যবহার করি তা তো রেশ এর জন্ম দেয়ই।

এর পাশাপাশি এই সানস্ক্রিনের উপাদান থেকে চুলের ইরিটেশন হতে পারে, ফলিকল দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

এস.পি.এফ কী? 

‘এস.পি.এফ’-এর অর্থ ‘স্পেসিফিক প্রোটেকশন ফ্যাক্টর’।

যে কোনও সানস্ক্রিন আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে আমাদের ত্বককে কতটা সুরক্ষা দিতে পারবে, ‘এস পি এফ’ দিয়ে আদতে সেটাই মাপা হয়।

সানস্ক্রিনে এই এই এস.পি.এফ এর মাত্রা যতটা বেশি হবে, আপনার ত্বকের সুরক্ষাও ততটা বেশি হবে।

অর্থাৎ, এস.পি.এফ-৩০ যতটা সুরক্ষা দেবে, এস.পি.এফ-৫০ এর ক্ষেত্রে নিশ্চিত ভাবে তার চেয়ে বেশি সুরক্ষা পাওয়া যাবে।

চেষ্টা করুন নূন্যতম এস পি এফ-৩০ ব্যবহার করার। এতে করে ত্বক এর ক্ষতি হবে না এবং স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বজায় থাকবে। 

তবে যদি কড়া রোদে বের হবার দরকার পড়ে, তবে অবশ্যই এস.পি.এফ-৫০ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

সানস্ক্রিন কেনার সময় যেগুলো খেয়াল করতে হবে

কোনো প্রসাধনীর মেয়াদ ও উপাদান না দেখে কিনা উচিত না।

খেয়াল করতে হবে সানস্ক্রিনে যেন টিটানিয়াম ডিঅক্সাইড, অক্টাইল মেথোক্সিসিনামেট (ওএমসি), অ্যাভোবেনজন ও জিঙ্ক অক্সাইড থাকে।

ত্বক ব্রণ প্রবণ বা তৈলাক্ত হলে জেল বা পানি ভিত্তিক অথবা ‘নন-কমেডোজেনিক এবং হাইপোঅ্যালার্জেনিক সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

নন-কমেডোজেনিক সানস্ক্রিনই কিনুন। এই সানস্ক্রিন ত্বকের রোমছিদ্র বন্ধ করবে না, ফলে ব্রণের উপদ্রবও হবে না।

সানস্ক্রিন যেন দীর্ঘস্থায়ী হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। 

সানস্ক্রিন ব্যবহারের প্রথম শর্তই হলো তা আপনার ত্বককে এমনভাবে সুরক্ষিত রাখবে যাতে আলট্রা ভায়োলেট বি রশ্মির আপনার ত্বকে ঢুকতেই না পারে।

ইউভি-বি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে নূন্যতম ৩০ থেকে ৫০ এস.পি.এফ-যুক্ত সানস্ক্রিন কিনুন।

ইউভি-বি রশ্মির পাশাপাশি ইউভি-এ থেকেও সুরক্ষা দরকার।

কেনার আগে সানস্ক্রিনের লেবেলে PA+, PA++, PA+++ এরকম কিছু লেখা আছে কিনা দেখে নিন। যতগুলো প্লাস চিহ্ন থাকবে, আপনার ত্বকও ততই ইউভি-এ থেকে সুরক্ষিত থাকবে।

মুখের সান প্রোটেকশন ক্রিম খুব ভারী হলে মুশকিল। তাই হালকা মিস্টের মতো সানস্ক্রিন স্প্রে ব্যবহার করুন। মুখ বাদে বাকি শরীরে অবশ্য ভারী সানব্লক মাখতে পারেন।

সমুদ্রের ধারে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান থাকলে সে ক্ষেত্রে আপনার সানস্ক্রিনের এসপিএফ অন্তত ৫০ হতে হবে।

তাই ভালো মান এর সানস্ক্রিন কিনুন। মানহীন পণ্য ব্যবহার করে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না।

সানস্ক্রিন এর সাইড এফেক্টগুলো থেকে বাঁচার উপায়

  • মুখ লাল হতে শুরু করলে বা চুলকানি হলেই সানস্ক্রিন ধুয়ে দিন আর ব্যবহার করা বন্ধ করুন।
  • ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নতুন সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
  • অনেক ক্ষণের জন্য বাইরে গেলে ২ ঘণ্টা অন্তর অন্তর সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
  • যদি ঠোঁটে লিপবাম ব্যবহার করেন যা সানস্ক্রিনের কাজ করে তাহলে তা শুধু ঠোঁটেই ব্যবহার করুন।
  • বাচ্চাদের জন্য সাবধানে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
  • ৬ মাসের কম বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন না।
  • আপনার যদি তৈলাক্ত ত্বক হয় তাহলে নন-কমেডোজেনিক আর নন-অয়েলি সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

সানস্ক্রিন ছাড়া তো আমাদের চলবে না। তাই সাবধানে সানস্ক্রিন বাছুন।

চেষ্টা করুন প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি সানস্ক্রিন ব্যবহার করার।

তাহলে এই রোদেও আপনি সুস্থ থাকবেন।