একবিংশ শতাব্দীর নারীদের কাছে এখন সৌন্দর্য হল গ্লোয়িং ফেইস আর সুন্দর ব্যক্তিত্বের সমন্বয়।
আর বাড়িতে থাকা কাঁচা হলুদের বদৌলতেই যদি সেই বহুকাঙ্ক্ষিত গ্লোয়িং স্কিন পাওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই!
গ্ল্যামোজেনের এবারের আয়োজনে থাকছে, এমনই কিছু স্বাস্থ্যসম্মত হারবাল টিপস।
খাদ্য গুনাগুণ
কাঁচাহলুদ আর দুধের এই মিল্কশেকে আপনি পাবেন প্রচুর মানসম্মত খাদ্যউপাদান।
এতে রয়েছে এক্সিলেন্ট সোর্স অফ এন্টি অক্সিডেন্ট, এন্টি ক্যান্সারোজিন, হজমের এনজাইম।
এছাড়া রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার ক্ষেত্রে এই ড্রিংক্সটা কাজ করে বেশ সাথে সাথে।
ঠান্ডা-সর্দির জন্য খুব ভালো একটা টোটকা।
আর যারা রূপচর্চা/ফর্সা/গায়ের দাগ তুলতে চান ন্যাচারালি উইথ আমেইজিং স্কিন টোন।
পরখ করে দেখুন না মাসখানেক!
প্রস্তুত প্রণালী
প্রথমে দুধ চুলায় পরিমাণ মতো জ্বাল দিতে হবে।
পরিমাণটা হবে- যে যেমন খেতে পারেন- (১কাপ / ১গ্লাস)।
যখন দুধটা টগবগ করে ফুটবে, কাঁচা হলুদ কুচি এর মধ্যে ছেড়ে দিন এক-দেড় চা চামচ।
এরপর মিনিট পাঁচেক ফুটতে দিন। দেখবেন, একটা মিষ্টি হলদে রঙ চলে আসছে।
তখন দুধটা ছেঁচে ঠান্ডা করে খেতে হবে।
খাওয়ার সময়
এটা খাওয়ার ফিক্সড টাইম নেই। দিনে একবার খেলেই হয়।
তবে ব্যবহারকারীদের অনেকেই বলেছেন, সকালবেলা খালি পেটে খেলে, ফলাফলটা বেশ দ্রুত আসে।
সতর্কতা
এই হলুদ-দুধের শেইক বানাতে, কিছুতেই গুড়া দুধ বা গুড়া করা হলুদ দিয়ে হবে না।
এতে ভেষজ গুণ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
হলুদটা কাঁচা হতেই হবে এবং তা আপনি ফ্রিজে সপ্তাহ খানেকেরটা সহজেই প্রিজার্ভ করতে পারেন।
ব্যবহারকারীর বয়ানে
কেমন ছিল অভিজ্ঞতা এই মিল্কশেইক খাওয়ার?- গ্ল্যামোজেনের এই প্রশ্নে জবাব একজন নিয়মিত ব্যবহারকারি ফাতেমা আপু বলেন,
“আমার জন্মটা বিদেশের তীব্র ঠান্ডায়, ওখানেই বড় হয়েছি বেশ কিছুদিন।
এই দেশে আসার পর এমন হিউমেডিটির আবহাওয়ায় শরীর এডজাস্ট করতে পারতো না।
এলার্জি, ধূলাবালির প্রব্লেম, সাথে মশার কামড়ের- প্রচন্ড রকম দাগ ছিল সারা গায়ে।
সেটা এডজাস্ট হতে না হতেই আরেক বিপদ-
ট্রপিকাল কান্ট্রির ওয়েদারে “মাইট” নামের একটা ছোট্ট পোকা আছে, যা খালি চোখে দেখা যায় না।
আমাদের সবার স্কিনেই টাচ করে, আবহাওয়ায় আছে বলে।
তার শরীর থেকে নিঃসৃত রস, আমার শরীরে লাগ্লেই ফুলে ওঠে, র্যাশ হয়!
অনেক দিন স্টাডি করে ইন্ডিয়ান এবং আমাদের স্কিন স্পেশালিষ্টরা আমাকে এ ব্যাপারে তথ্য দেন।
আমার মধ্যে এন্টিবডি কম, এই মাইটের এগেইন্সটে।
কারণ, জন্মের পর যেখানে অনেকদিন ছিলাম, ঠান্ডার দেশ বলে পোকাটা কমছিল না।
তাই জন্মের পরপরই আমার শরীর ওটা না পাওয়ায়, ওটার সাথে ফাইট করার এন্টিবডি তৈরি করে নাই।
ফলস্বরূপ, এদেশে এখন ৮ মাসের ভ্যাবসা গরমে আমার সারা গা লাল হয়ে যায়,দাগ পড়ে মোজাইকের মতো।
নিজের কাছে কাপড় পড়লে নিজেরই খারাপ লাগতো, উজ্জ্বল শ্যামল মিষ্টি গায়ের রং আমার।
কিন্তু দাগের মোজাইক বডি কার ভাল্লাগে।
শরীর বাইরের কাউকে দেখাতাম না, বাট নিজের কাছে নিজের তো একটা স্যাটিস্ফেকশন থাকে!
বাট যখন থেকে এই থেরাপিটা শুরু করি, তার ২-৩ মাসের মধ্যেই দেখছি পরিবর্তন।
নিজের কোমর, পিঠ, ঘাড় স্কিন দেখে নিজেরই ভাল্লাগে।”
আর এরকম কনফিডেন্স নারীতে পরিণত হলে, বিকশিত হয় একজনের ভেতরের সৌন্দর্য্য।
আর সেই প্রচেষ্টাতেই কাজ করে যাচ্ছে এমন স্নিগ্ধ, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর নারীদের জন্য গ্ল্যামোজেন।
অতঃপর কিছু কুসংস্কার
আমাদের দেশে আর কিছু না হোক, বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা আছে এই খাবার নিয়ে বেশ জম-জমাটভাবে।
কাঁচাহলুদ-দুধের এই ড্রিংকটাকে ঘিরেও ভুল কানাঘুষোর কমতি নেই।
এবার গ্ল্যামোজন তেমনই কিছু ভুল কনসেপ্টের সঠিক তথ্য দিবে।
প্রশ্ন ১. কাঁচা-হলদি দুধ রেগুলার খেলে নাকি জন্ডিস হয়?
উত্তরঃ একদম ভুল ধারণা! জন্ডিস হয় আমাদের লিভারের উপর একটা ভাইরাল আক্রমণে।
কেন কাঁচা হলুদের মতো এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদান খেলে জন্ডিস হবে?
প্রশ্ন ২. ছেলেদের ক্ষেত্রে কি এটা খাওয়া এলাউড?
মানে এসব টিপস ইউজ করে ছেলেদের স্কিন ফ্রেশ হবে?
উত্তরঃ জ্বী ভাই। কেন হবে না? এটা ভেষজ একটা উপাদান।
সব ধরণের মানব শরীরেই কাজ করবে।
এবং খালি স্কিনই না, এটা হজমে হেল্প করবে। ক্যান্সার এর প্রতিরোধে সাহায্য করে।
আরও কত কি! নিশ্চিন্তে ইউজ করতে পারেন।
প্রশ্ন ৩. আমি র্যাপিড রেজাল্ট চাই। এটা ইউজ করে কোন র্যাপিড ফল পাব?
উত্তরঃ নানা কেমিকেল সমৃদ্ধ প্রডাক্ট ইউজ করে এক উইকের মধ্যে রেজাল্ট পান ফর্সা ত্বকের, রাইট?
এবার বলেন তো, যখন কোন কারণে ইউজ করা ছেড়ে দেন ঐ কেমিক্যাল ক্রিম, কী কী সাইড ইফেক্ট দেখেন?
উত্তরটা দিয়েই দিচ্ছি, মুখে আগের থেকে দ্বিগুণ কালো কালো ছোপ ফেরত আসে।
র্যাশে ভরে যায়। অনেকের রিয়েকশন আরও ভয়াবহ হয়।
এর মানে কি দাঁড়ায়? আপাততঃ দৃষ্টিতে কেমিকেল গুলো তড়িৎ গতিতে কাজ করছে মনে হলেও,
এটা কোন পারমানেন্ট সল্যুশন না। বরং বেশ ক্ষতিকর।
এবং গ্ল্যামোজেন কিন্তু কখনই এরকম ক্ষতিকর প্রডাক্ট ব্যবহার করতে, কাউকে উৎসাহিত করে না।
তার থেকে ৩-৪ মাস টাইম নিয়ে একটু ধৈর্য ধরে দেখুন না! ক্ষতি কি?
যদি ভেতর থেকে প্রাকৃতিকভাবে আসল জিনিস পান?
প্রশ্ন ৪. আমি দুধ খেতে পারি না। ভাল্লাগে না। খালি রস খেলে হবে?
উত্তরঃ এটা কনফিউশন্যাল। কেননা, এই মিল্কশেইক বানানোর যত প্রসেস দেখা হয়েছে,
হারবাল/আয়ুর্বেদিক – সব জায়গায় দুধ/দুধের মালাই এর সাথেই এই হলুদের মিক্সচার এর ব্যবহার করা হয়েছে।
খালি রসে কাজ হলে, নিশ্চইয় সেটাই ইউজ করতো। দুধের ঝামেলায় যেত না খামোকা।
খুব সম্ভবত দুধের উপাদানের সাথে কাঁচা হলুদ গরমে বিক্রিয়া করে এমন কোন যৌগ তৈরি করে।
যা শরীর সহজে গ্রহণ করে। যেমন- ভিটামিন ডি দুধে খেতে হয়।
পানিতে মিশিয়ে খেলে শরীরে লাগে না।
আর সহ্য করে নাক মুখ বন্ধ করে ওষুধের মতো এক কাপ খেয়েই দেখেন না!
ভাল কিছু কি বিনা কষ্টে লাভ করা যায়?
প্রশ্ন ৫. কতদিন খাব?
উত্তরঃ কোন প্রকার কেমিক্যাল সাইড ইফেক্টে ছাড়াই যে ভাল রেজাল্ট পাচ্ছেন-
সেটা ততোদিনই পাবেন, যতদিন এই মিল্ক-শেইক খাওয়াটা কন্টিনিউ করবেন।
মাঝে মাঝে ১-২ দিন মিস যেতেই পারে।
তবে চেষ্টা করবেন, রেগুলার সকালের বা দুপুরের খাবারের মতো এটা একটা আবশ্যক আইটেম বানিয়ে খেতে।
তাহলে সহজেই মনে থাকবে।
প্রশ্ন ৬. প্রেগন্যান্সির টাইমে খাওয়া যাবে?
উত্তরঃ একজন গায়নোকলোজিস্ট এর পরামর্শ নেয়া নিরাপদ।
কারণ, এটা পার্সন টু পার্সন ভ্যারি করে।
তাই ডাক্তারের সাথে চেক আপের টাইমে কথা বলে জেনে নেয়া ভালো।
বাড়তি টিপস
হলুদের ইন্টেন্সিটি বাড়াতে, কাঁচা হলুদের টুকরাগুলো কুচি কুচি করার বদলে, ছেঁচেও দিতে পারেন।
তবে বেঁটে না দেয়াটা বেটার। ছাঁকলেও আঁশগুলো মুখে লাগবে। বাজে ফিলিংস আসবে।