অ্যাসিড শব্দটি শুনলেই যেনো টেস্ট টিউবের ছবি এবং ভীতিকর রাসায়নিক পদার্থ পোড়ার চিন্তাভাবনা মাথায় আসে।
কিন্তু যখন অ্যাসিড সঠিক ঘনত্বে ব্যবহার করা হয় তখন কিন্তু ত্বকের যত্নে পাওয়া যায় উপকারী কিছু উপাদান।
এবার প্রশ্ন আসতে পারে, অ্যাসিড আবার কিভাবে স্কিন কেয়ারে কাজ করে?
এই অ্যাসিড আসলে সেই অ্যাসিড না বরং এগুলো আধুনিক স্কিন কেয়ারে নতুন সব উপাদান, যা ত্বককে দেয় সজীবতা।
বৃদ্ধি করে উজ্জ্বলতা এবং দূর করে ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা।
মার্কেটে আজকাল নানা ধরনের অ্যাসিডযুক্ত বিউটি প্রোডাক্ট পাওয়া যায়।
আমাদের ব্যবহৃত প্রোডাক্ট গুলোতেই সাধারণত অ্যাসিড থাকে কিন্তু আমরা তা না জেনে, না বুঝে আমাদের ত্বকের জন্য সঠিক প্রোডাক্ট বাছাই করতে পারি না।
তাই আজকে স্কিন কেয়ারে ব্যবহৃত অ্যাসিডগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
হায়ালিউরনিক অ্যাসিড
হায়ালিউরনিক অ্যাসিড অ্যাসিড মূলত এর হাইড্রেটিং বৈশিষ্ট্যের জন্য জনপ্রিয়।
ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা এবং ডিহাইড্রেটেড স্কিনে হাইড্রেশন ফিরে পেতে সাহায্য করে এই অ্যাসিড।
হায়ালিউরনিক অ্যাসিড মূলত একটি হিউমেকটেন্ট।
প্রকৃতি প্রদত্তভাবে আমাদের স্কিনে এ হায়ালুরনিক অ্যাসিড থাকে।
হিউমেকটেন্ট এর কাজ হলো পরিবেশ বা স্কিন সেল থেকে পানি নিয়ে তা ধারন করা এবং স্কিনকে হাইড্রেটেড ও প্লাম্পি রাখা।
এটি স্কিনের ওয়াটার লস আটকায় এবং ময়েশ্চারকে ধরে রাখে।
হায়ালিউরনিক অ্যাসিড ওয়াটার ড্র করে স্কিনকে হাইড্রেশন দেয়৷
আর এই অ্যাসিড যে কোন উপাদানের সাথে সহজেই ব্যবহার করা যায়।
নায়াসিনামাইড
নায়াসিনামাইড ভিটামিন B3 বা নিকোটিনামাইড নামে পরিচিত।
সব সমস্যার এক সমাধানের কথা বললে সবার আগে নায়াসিনামাইড এর নাম আসে।
নায়াসিনামাইড এমন একটি অ্যাসিড যার কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই এবং প্রায় সব ধরনের ত্বকের জন্য উপকারী।
নায়াসিনামাইড একনে কন্ট্রোল, মেলানিন এর উৎপাদন এবং কার্যক্ষমতা কমাতে সাহায্য করে।
ত্বকের লিপিড এর পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে, মেছতার বিরুদ্ধে লড়াই করে।
সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মির কারণে আমাদের স্কিনের যা যা ক্ষতি হয় সেটা থেকে রক্ষা করে, ত্বকের মলিনতা দূর করে, সিবাম উৎপন্ন হওয়া কমায়।
বয়সের ছাপ কমানোসহ নানা রকমের সমস্যার সমাধান করে থাকে।
ল্যাকটিক অ্যাসিড
ল্যাকটিক অ্যাসিড হলো একমাত্র AHA যা একই সাথে ময়েশ্চারাইজিং এবং এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে।
স্কিন গ্লো করতে এবং প্যাচ রিমুভ করতে ল্যাকটিক অ্যাসিড খুব ভালো কাজ করে।
এছাড়াও আনইভেন টোন দূর করে।
যারা হোয়াইটহেডস এর সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য ল্যাকটিক অ্যাসিড হতে পারে একটি কার্যকরী উপাদান।
মূলত ল্যাকটিক অ্যাসিড একটি হেলদি গ্লোয়িং স্কিন পেতে সাহায্য করে৷
এটি সরাসরি পেপটাইড, রেটিনয়েড, ভিটামিন সি ইত্যাদির সাথে একই রুটিনে ব্যবহার না করাই ভালো।
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড একটি বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড।
বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড তেলের সাথে দ্রবণীয় তাই এটা স্কিনের লিপিড স্তরের ভেতর দিয়ে পোরসের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে এবং ক্লগড পোরস আনক্লগ করে।
আলফা ও বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড দুটোই ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে, কিন্তু AHA জলে দ্রবণীয়, অন্যদিকে BHA তেলে দ্রবণীয়।
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড মূলত ব্রণ, একনি, র্যাশ এর বিরুদ্ধে কাজ করে।
ত্বকের সিবাম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, স্কিনের পোরস পরিষ্কার রাখে, স্কিনটোন ইমপ্রুভ করে, কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে।
ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো কাজ করে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড।
তবে গর্ভবতী, ব্রেস্টফিডিং মাম এই অ্যাসিড ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন।
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড এমন একটি পদার্থ যা রাসায়নিকভাবে ত্বকের ডেড সেলস এবং তেল দ্রবীভূত করে ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে।
এটি প্রাকৃতিকভাবে কিছু গাছপালা, যেমন বীট, আখ এবং কিছু ফলের মধ্যে উপস্থিত থাকে।
ব্ল্যাকহেডস এবং ব্রণের সমস্যা দূর করতে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড একটি অসাধারণ উপাদান।
এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
এছাড়াও ওপেন পোরস, একনে, ছোট ছোট বাম্পস, হোয়াইটহেডস, ডালনেস ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে এই অ্যাসিড।
বয়সের ছাপ কমাতেও এর জুড়ি নেই।
ব্ল্যাকহেডস এবং ব্রণের সমস্যা দূর করতে এটি একটি অসাধারণ উপাদান।
এটি একটি বহুমুখী এএইচএ, যা ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং পোরস মিনিমাইজ করতে সাহায্য করে।
বয়সের ছাপ কমাতেও এর জুড়ি নেই। এই অ্যসিড রাতে ব্যবহার করাই শ্রেয়।
অ্যাসকরবিক অ্যাসিড
অ্যাসকরবিক এসিড ভিটামিন সি এর একটি সিন্থেটিক সংস্করণ, যার রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সুবিধা।
উজ্জ্বলতার পাশাপাশি এটা ত্বককে মসৃণ ও কোমল রাখতে সহায়তা করে।
ভিটামিন সি বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড কোষ সতেজ করে কোলেজেন বৃদ্ধি করে ফলে ত্বক দেখতে টান টান লাগে।
ভিটামিন সি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখার পাশাপাশি উজ্জ্বলতা ও সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
সানস্ক্রিন ব্যবহারের আগে ভিটামিন-সি যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহারে এস.পি.এফ এর কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়।
ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড
ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড হলো এক ধরনের মৃদু আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (AHA)।
এই অ্যাসিড মূলত বাদাম থেকে উৎপন্ন হয়ে থাকে।
স্কিন টেক্সচার ইম্প্রুভের পাশাপাশি এক্সফোলিয়েশনের কাজও করে থাকে।
এই অ্যাসিড-এর অণুগুলো গ্লাইকোলিক এসিডের চাইতে খানিকটা বড়।
উচ্চ অ্যাসিডিক হলেও এটি গ্লাইকোলিক অ্যাসিড এর থেকে কম শক্তিশালী।
এটি ত্বকের মেলাসমা, হাইপার-পিগমেন্টেশন, রিংকেল ইত্যাদি ক্ষেত্রে জাদুর মতো কাজ করে।
রেটিনল
রেটিনল মূলত ভিটামিন এ থেকে তৈরি হয়।
এটি ত্বকের সেল রিনিউ করে রিঙ্কেল, ফাইন লাইন প্রিভেন্ট করে, ত্বকে ব্রণের হার কমায়।
ব্রণের দাগ দ্রুত হালকা করে।
ত্বকের সেল দ্রুত রিনিউ হয় বলে ডার্ক প্যাচ, সান ড্যামেজ ইত্যাদি দ্রুত কমে।
তবে এটি ভিটামিন সি, সরাসরি অ্যাসিড, কপার এর সঙ্গে এক রুটিনে ব্যবহার করা যায় না।
এই অ্যাসিড রাতে ব্যবহারের উপযোগী।
অ্যাজেলাইক অ্যাসিড
অ্যাজেলাইক অ্যাসিড একটি প্রাকৃতিক অ্যাসিড যা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের উাপাদান জগতে একটি মাল্টি ট্যালেন্টেড অ্যাসিড হলো এজেলিক অ্যাসিড।
এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণীয় গুণ হচ্ছে স্কিন টোন ব্রাইট করা।
এটি ব্রাইটেনিং এর সাথে সাথে টেক্সচার ইমপ্রুভ করে, পিগমেন্টেশন ফেইড করে ও ইভেনটোন দেয়।
একনি, ব্লেমিস, রেডনেস ডালনেস ও ডার্ক স্পট এর জন্য এটি একক ভাবে কাজ করে৷
এর জন্যই একে মাল্টি টাস্কার বলা হয়।
এই অ্যাসিড রাতে ব্যবহার করা উত্তম।
সাইট্রিক অ্যাসিড
টক ফল থেকে প্রাপ্ত এই অ্যাসিড মূলত বেটা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড (BHA)।
এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ একটি অ্যাসিড, যা ত্বকের অকালে বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
এটি এএইচএর তুলনায় কম অ্যাসিডিক। নায়াসিনামাইড, পেপটাইডস, ডিরেক্ট অ্যাসিড, রেটিনয়েডস ইত্যাদির সঙ্গে একত্রে এই অ্যাসিড ব্যবহার করা যায় না।
এবং এটি রাতে ব্যবহার করা উত্তম।
ওলিক অ্যাসিড
শুষ্ক ত্বকের অধিকারীরা স্কিন কেয়ারে এই অ্যাসিড রাখতে পারেন।
এটি ফ্যাটি অ্যাসিডসম্পন্ন ময়েশ্চারাইজারের একটি কম্পাউন্ড।
এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য থাকায় যাঁদের সোরিয়াসিস, অ্যাকজিমা, এমনকি সিবোরিক ডার্মাটাইটিস (মাথার ত্বকে অতিরিক্ত খুশকি), তাঁদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী একটি উপাদান।
ফেরুলিক অ্যাসিড
এটি ফ্রী র্যাডিক্যালসম্পন্ন একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলো রোধ করতে সহায়তা করে।
এই অ্যাসিড সাধারণত ভিটামিন সি, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, ভিটামিন ই ইত্যাদি কম্পাউন্ডের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আপেল, কমলার মতো গাছের কোষের দেয়ালে এবং বীজে এই অ্যাসিড পাওয়া যায়।
তবে অতিরিক্ত প্রোসেস এই অ্যাসিডের কার্যকারিতা নষ্ট করে, তাই কেনার আগে দেখে নিতে হবে কোন প্রোডাক্টে এটি কতোটুকু প্রোসেস করা আছে।
সতর্কতা
বর্তমানে আমাদের দেশীয় আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে স্কিন কেয়ারে এই অ্যাসিডগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
যেকোনো অনলাইন শপ থেকে প্রি-অর্ডারে কিংবা স্পট পারচেজ প্রোসেস কেনা সম্ভব এই প্রোডাক্টগুলো।
তবে অ্যাসিড ব্যবহারে প্রয়োজন অতিরিক্ত সতর্কতা। যেমন—
- অ্যাসিড ত্বককে সেনসিটিভ করে তোলে, তাই বাইরে বের হলে এবং বাসায় থাকলে দিনে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
- যারা স্কিন কেয়ারে অ্যাসিড ব্যবহারে একেবারেই নতুন, তাঁরা অবশ্যই প্রোডাক্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কম পরিমাণে অ্যাসিড আছে, এমন প্রোডাক্ট বেছে নিন। ত্বকে মানিয়ে গেলে ধীরে ধীরে এর পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
- জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বেড়েছে নকল পণ্য। তাই বিশ্বস্ত এবং ভালো জায়গা থেকে কেনার চেষ্টা করুন।
- যেকোনো প্রোডাক্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রেই প্রথমে প্যাচ টেস্ট করে নিন যে আপনি এতে অ্যালার্জিক কিনা।
- স্কিন অতিরিক্ত সেনসিটিভ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
স্কিন ও হেয়ার কেয়ারের জন্য ১০০% অরিজিনাল প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে shop.glamozen.com এ ভিজিট করুন। গ্ল্যামোজেন দিচ্ছে বাজেট ফ্রেন্ডলি ব্র্যান্ডেড অ্যান্ড অথেনটিক প্রোডাক্টের নিশ্চয়তা। নকলের অভয়ারণ্যে খুঁজে নিন আপনার ভরসার আশ্রয়স্থল। সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন।