ত্বক ও চুলের প্রভূত সমস্যার সুরাহা স্বরূপ ভিটামিন ই ক্যাপসুল এখন আমাদের অন্যতম ভরসা।
স্কিনের টোন ও স্বাস্থ্য মজবুত করতে এটির বহুল ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
সবুজ বা হলুদ রঙের এই পিলগুলির সহজলভ্যতাও অনলাইন বা অফলাইন মার্কেটে ব্যাপক।
ভিটামিন ই এর রাসায়নিক প্রক্রিয়া ত্বকের অক্সিডেশনকে রোধ করে তার ক্ষতিকর প্রভাবকে হ্রাস করে।
এই জন্য কখনো ডাক্তারী পরামর্শে বা কখনো নিজে থেকেই এটি যথেচ্ছ ব্যবহারের চল খুব বেড়েছে।
তাই আমরা দেখবো কিভাবে এটা স্কিনে ব্যবহার করবেন সুরক্ষিত উপায়ে।
কি কি অবস্থায় ভিটামিন ই ব্যবহার করবেন?
- স্কিন রুক্ষ ও শুস্ক হয়ে থাকলে।
- ত্বক তার স্বাভাবিক উজ্বলতা হারালে।
- একনে, ব্ল্যাকহেড, স্কার বা বসন্তের দাগ তুলতে।
- মেচেতা পড়লে।
- ডার্ক সার্কেল দূর করতে।
- গলা, কনুই, কোমরে ব্ল্যাক স্পট দূর করতে।
- বলিরেখা বা কুঞ্চিত ত্বক বা ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের কোষ মসৃন ও ঠিক রাখতে।
- চুলের ম্যাড়ম্যাড়ে ভাব দূর করে তারুণ্য ফিরিয়ে আনতে ও নতুন চুলের এক্সফোলিয়েশন ঘটাতে।
কতটা কার্যকর ভিটামিন ই ত্বকে?
- ভিটামিন ই এর বহুল ব্যবহারের সাথে আমরা পরিচিত। কিন্তু তার সিংহ ভাগটাই রয়েছে চুলকে কেন্দ্র করে। ক্যাপসুল সাধারণত খাবার নিদান দেয়া হয় খনিজের ঘাটতি মেটাতে। কিন্তু ত্বকে ক্যাপসুল অয়েল এর কার্যকারিতা নিয়ে সেভাবে আলোকপাত করা হয়নি।
- এতে থাকা টোকেফেরোল নামে এন্টি অক্সিডেন্ট ত্বককে ফ্রি রাডিক্যাল এর হাত থেকে রক্ষা করে।
- এর মধ্যে আছে এন্টি এজিং উপাদান যা ত্বকের অকাল বার্ধক্য আটকায়।
- ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার এর কাজ করে এমনকি ক্ষতিকারক সূর্যরশ্মির প্রভাব থেকেও বাঁচায়।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল অয়েলের আদর্শ ব্যবহার
নাইট ক্রিম
- আপনার প্রতিদিনের রুটিনে থাকা বাজারচলতি নাইট ক্রিম এই প্যাক বানানোর জন্য বাছতে পারেন। সমস্যা নেই।
- একটা পাত্রে আন্দাজমত নাইটক্রিম নিয়ে তাতে একটা ক্যাপসুল কেটে কয়েক ফোঁটা তেল মিশিয়ে নিতে হবে।
- তারপর সেটা চক্রাকারে গোটা মুখে মেখে নিন ও রাতভর ছেড়ে রাখুন।
- পরদিন সকালে উঠে তা পরিষ্কার জল বা গরম জলে ধুয়ে নিলেই হবে।
সিরাম
- এটিকে ত্বকীয় সিরাম হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে তবে তার আগে নিজের স্কিনের টেক্সচার সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি।
- যদি তৈলাক্ত ত্বক হয় তবে তার জন্য একটি পিলই যথেষ্ট কিন্তু ত্বক শুষ্ক হলে তার জন্য একাধিক লাগবে।
- এর জন্য ক্যাপসুল থেকে তেল বের করে তার সাথে এলোভেরা জেল যোগ করে মিশিয়ে নিন ভালো মতো। সেই মিশ্রণ মুখের উপর হালকা চাপ দিয়ে বসিয়ে নিতে হবে। সাবধান চাপ দেবেন না কোনোভাবেই।
- হেয়ার সিরামের জন্য ক্যাপসুল তেলের সাথে নারকেল তেল ১:২ অনুপাতে মিশিয়ে তা স্ক্যাল্পে অল্প অল্প করে লাগিয়ে নিতে হবে। তারপর দিন শ্যাম্পু করে নেবেন। চুল হবে লম্বা, ঘন ও সিল্কি।
চোখের ক্রিম
- আজকাল জেন ওয়াই এর রাতজাগা যে নিত্য অভ্যেস তা নিশ্চই বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাই ডার্ক সার্কেল হয় অনিবার্য পরিণতি।
- এটি থেকে মুক্তি পেতে আমন্ড অয়েল হাফ চামচ এর সাথে কয়েক ফোঁটা ভিটামিন ই ক্যাপসুল তেল মিশিয়ে চোখের তলায় হালকা করে মেসেজ করুন।
- এর ফলে চোখের কালো দাগ ও যাবেই সাথে কোঁকড়ানো চামড়া ও মৃতকোষ ও সজীব হয়ে উঠবে।
গলা, কনুই, কোমরে, হাঁটুর ব্ল্যাক স্পট দূর করতে
- আমাদের অনেকেরই এই কালচে দাগ গুলি অনেক অস্বস্তির মূলে থাকে। সময়ে অসময়ে আমাদের বিব্রত ও করে থাকে। এর জন্য দুটি উপায় আছে।
- প্রথম উপায়ে নিজেদের পছন্দের ময়শ্চারাইজার এর সাথে ক্যাপসুলের তেল এক চামচ মতো বের করে তা সমগ্র কালচে দাগ বিশিষ্ট জায়গায় ভালো করে নিয়মিত লাগাতে হবে।
- দ্বিতীয় উপায়ে খানিকটা দই(২-৩চামচ) ও মধু ১ চা চামচ মতো নিয়ে একটা গোটা ক্যাপসুলের তেল ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। শেষে এড করে দিন কয়েক ফোঁটা লেবুর রস। এবার এটা লাগান ও সুফল লাভ করুন।
- এটা শুধু কালচে দাগই নয়, বরং বলিরেখা, মেচেতার দাগ ও ব্রণের আক্রমণের বিরুদ্ধেও ভালো কাজ করে।
লিপবাম
- শীতকালে তো বটেই সারাবছরই যদি নিজেদের ঠোঁটের গোলাপি মসৃণতা ধরে রাখতে চান তবে অবশ্য ব্যবহার করুন এই ফর্মুলা।
- পেট্রোলিয়াম জেলির সাথে একটি ক্যাপসুল এর নির্যাস বের করে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে সেটা ঠোঁটে লাগাতে পারেন।
- ফাটা ঠোঁট, বিবর্ণ হওয়া বা শক্ত হওয়া চামড়া নিমেষে দূর হবে।
বোনাস টিপস
- চা তেল, ল্যাভেন্ডার ও ক্যাপসুল অয়েল একত্রে মিশিয়ে লাগান। এর এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুন এলার্জি প্রতিরোধ করে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সতর্ক থাকুন
- কখনোই নখ দিয়ে খুঁটে তেল বার করবেন না ক্যাপসুল থেকে। এতে নখের ময়লা থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
- স্কিন স্পর্শকাতর হলে ডাক্তারি পরামর্শ করে তবেই লাগান।
- যারা সোরিয়াসিস বা কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস এ ভুগছেন তারা এর ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
- ওভারডোজ হলে ত্বকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া, রেশ ও লাল লাল ছোপ পড়তে পারে।
- তৈলাক্ত ত্বক হলে বেশি ব্যবহার করবেন না।
- রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা বা অন্যান্য ওষুধ গ্রহণকালে এলার্জি বা চুলকুনি নিয়ে আসতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে অকারণে ভিটামিন খাওয়া থেকেও বিপদ হতে পারে। শরীরে ভিটামিন-ই এর যদিও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তবুও সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে কিছু অবাঞ্ছিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করবেন।