চুলের যে সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি আমরা দেখে থাকি তা হল চুল পড়ার সমস্যা। স্বাভাবিক ভাবেই কিছু চুল পড়বেই।
কিন্তু সমস্যা হয় তখনই যখন চুল না গজায়।
ভাবুন তো, আমরা যদি দেখি রোজ চুল আঁচড়াতে গেলেই গোছা গোছা চুল উঠছে, তাহলে কী মন খারাপ করে!
অনেক প্রোডাক্ট ব্যবহার করেও কিন্তু এই সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় না।
কিন্তু এই সমস্যার মোক্ষম উপায় একটাই, ভিটামিন ই।
ভিটামিন ই তে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান, যা চুলকে রক্ষা করে।
আসুন আরও বিস্তারিত জেনে নিই কীভাবে ভিটামিন ই চুল পড়া বন্ধ করে আর চুলের বৃদ্ধি ঘটায়।
যেভাবে ভিটামিন ‘ই’ চুলের উপকার করে
ভিটামিন ই তে আছে আলফা টোকোফেরল।
এই উপাদান চুলের রুক্ষতা, শুষ্কতা বজায় রাখে, চুল উজ্জ্বল করে তোলে।
আসলে খুব ভালো চুল নির্ভর করে বেশ কয়েকটি জিনিসের উপর।
স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য ভালো রাখা, চুলের গোড়ায় তেলের উপস্থিতি, রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকা, এই সব চুলের বৃদ্ধির জন্য খুব উপকারী।
আর ভিটামিন ই এই সবই খুব ভালো রাখে একসঙ্গে।
অর্থাৎ এক কথায়, ভিটামিন ই চুলের জন্য এক এবং একমাত্র ওষুধ।
রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখে
ভিটামিন ই রক্ত সঞ্চালনে খুব ভালো কাজ করে।
রক্ত চলাচলের পথে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না, গতি সচল রাখে।
যখন ভিটামিন ই সমৃদ্ধ তেল আমরা মাথায় ম্যাসাজ করি, তখন হেয়ার ফলিকল সজাগ হয়ে যায়।
আর এতেই সঞ্চালন ভালো হয়। আর এর ফলেই চুলের বৃদ্ধি ভালো হয়।
পি এইচ লেভেল ভালো রাখে
চুল পড়ার একটি বড় কারণ হল স্ক্যাল্পে অতিরিক্ত তেলের উৎপাদন হওয়া।
আর এর কারণ হল পি এইচ লেভেলের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া।
অতিরিক্ত তেল হলে সহজেই চুলে খুশকির সমস্যা হয়। ভিটামিন ই এই পি এইচ লেভেল খুব ভালো রাখে।
তাই তেলের অতিরিক্ত উৎপাদন কম হয়।
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদানের উপস্থিতি
ভিটামিন ই তে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। আর এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেল থেকে চুলকে রক্ষা করে।
চুলের গোড়া শক্ত করে। আর তার ফলে চুল পড়া, চুল ভেঙে যাওয়ার সমস্যা আর থাকে না।
হেয়ার কন্ডিশন করে
ভিটামিন ই চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখে। তার ফলে চুল নরম থাকে, স্মুথ থাকে।
চুল শুষ্ক হতে দেয় না সহজে ভিটামিন ই।
আর চুল নরম থাকা মানেই চুল উজ্জ্বল দেখানো।
যেভাবে ব্যবহার করবেন ভিটামিন ই
ট্যাবলেট সরাসরি না খেয়ে আগে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার খান।
ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার খান
ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার খান। এটি সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী উপায় আমাদের মধ্যে ভিটামিন ই প্রবেশ করানোর।
আর ভিতর থেকে যদি ভিটামিন ই কাজ শুরু করে তাহলে তা বেশি কার্যকরী হয়।
ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে সবচেয়ে ভালো হল পালং শাক, ব্রকোলি।
আর খেতে পারেন বাদাম, আমন্ড। এতেও অনেক ভিটামিন ই আছে।
আর রান্না করার সময়ে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ অলিভ অয়েলে রান্না করতে পারেন মাঝে মাঝে।
তবে খুব বেশি পরিমাণে ভিটামিন ই খাওয়া ঠিক নয়। এতে রক্ত মোটা হয়ে যেতে পারে। ত
াই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন আগে।
ভিটামিন ই সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করুন
অনেক রকম শ্যাম্পু তো ব্যবহার করলেন।
এবার বরং শ্যাম্পু ব্যবহার করার সময়ে দেখে নিন তাতে ভিটামিন ই আছে কিনা।
সেই রকম শ্যাম্পুই ব্যবহার করুন। যদিও শ্যাম্পু একা চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে না,
কিন্তু তাও ভিটামিন ই আছে এমন শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করলে চুলের গোড়া মজবুত খানিক হয়।
ভিটামিন ই অয়েলের ব্যবহার
মাথায় তেলের ম্যাসাজের কোনও বিকল্প হয় না চুল ভালো রাখার ক্ষেত্রে, চুলের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে।
তাই তেল যখন ব্যবহার করছেনই, তখন ভিটামিন ই আছে এমন তেল ব্যবহার করুন।
আপনি ভিটামিন ক্যাপসুল কিনুন। তার থেকে তেল বের করে নিন।
আগে চুল ভালো করে ধুয়ে নিয়ে শুকিয়ে নিন। তারপর চুলে ভিটামিন ই তেল লাগান।
৩০ মিনিট রাখুন। তারপর শ্যাম্পু করে নিন। আপনি তেলের ক্ষেত্রে পাম তেল, অ্যাভোকাডো তেল ব্যবহার করতে পারেন, কারণ তাতে প্রচুর ভিটামিন ই আছে।
হেয়ার মাস্কে ভিটামিন ই
আপনি সপ্তাহে এক দিন হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
তবে সেই মাস্ক হতে হবে এমন উপাদান দিয়ে তৈরি যার মধ্যে ভিটামিন ই আছে।
আসুন দেখে নিই কীভাবে বানাবেন সেই মাস্ক।
উপকরণ
- হাফ কাপ পাকা অ্যাভোকাডো
- ১ চামচ অলিভ অয়েল
- ভিটামিন ই অয়েল
পদ্ধতি
সব উপকরণ মিলিয়ে একটা স্মুথ পেস্ট বানান।
এবার এই পেস্ট মাথায় মেখে ৩০ মিনিট রেখে দিন।
তারপর শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার করে নিন। চুল খুব সুন্দর ভাবে বড় হবে।
অ্যাভোকাডো চুল পড়া বা ভেঙে যাওয়া আটকায়।
তবে একটা কথা মনে রাখবেন
খুব বেশি ভিটামিন ই ব্যবহার করলে কিন্তু মাথা চুলকাবে আর চুল পড়বে।
এবং অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।