অনেক খাবার খাবেন কিন্তু ওজন বাড়বে না, তা কি আবার সম্ভব?
হ্যা সম্ভব, একটু ক্যালরি বুঝে খেলেই তা সম্ভব।
এক্সারসাইজ এর পাশাপাশি একটি সুন্দর ডায়েট প্ল্যান আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
খাবারের কম্বিনেশন এবং সঠিক ডায়েট প্ল্যান আপনার বডির লিপিড কে ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করবে যা এনার্জি হিসেবে জমা হয়ে থাকে।
যে ধরনের খাবার প্রাধান্য পাবে
আমাদের রেগুলার খাবারের মধ্যে যোগ করতে হবে প্রোটিন ও আঁশ বা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার।
এগুলো বেশি করে খেতে হবে।
প্রোটিন এবং ফাইবার বহুক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
ফলে খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়, যে কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে খুব সহজেই।
তা ছাড়া ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি-ফল বেশি পরিমাণে খেলে মেটাবলিজম রেট তো বাড়েই, সঙ্গে হজম ক্ষমতারও উন্নতি ঘটে।
ফলে শরীরে জমে থাকা মেদ ঝরে যেতে সময় লাগে না।
যে খাবারগুলো ওজন কমাতে সাহায্য করে
মিষ্টি আলু
মিস্টি আলুতে রয়েছে খুব বেশি পরিমাণে ক্যারটিনয়েডস, এন্টি অক্সিডেন্ট যা রক্তের সুগারের মাত্রাকে স্ট্যাবল রাখতে সাহায্য করে।
একে বলা হয় “Slow Carb”। কারণ তারা ফ্যাট বার্ন করতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী।
মিষ্টি আলুতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি এবং বি ৬ যা এক্সারসাইজ করা অবস্থায় ঘাম ঝরাতে সাহায্য করে।
এরা হজম হয় খুব আস্তে এবং আপানাকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করার এনার্জি দেয়।
ডিম
অনেকে এই কথা জানেন যে ডিম পুষ্টি গুণে ভরপুর।
কিন্তু এর মাধ্যমে ওজন কমানো যায় সেটা খুব কম মানুষ ই জানেন।
ডিম Choline নামক এক ধরনের পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।
আমাদের শরীরের ভিতরে যে জিনের অংশ গুলোতে চর্বি জমে, সেইগুলোকে ডিমের এই পুষ্টি উপাদান টি নষ্ট করে।
গবেষণায় দেখা গেছে আপনি যদি সকালের নাস্তায় একটা ডিম রাখেন তাহলে সারাদিনে শরীরের ফ্যাট বার্ন হওয়া বৃদ্ধি পায়।
তাহলে আজ থেকেই সকালের নাস্তায় ২ টো করে ডিম রাখবেন যদি ফ্যাট বার্ন করতে চান।
আপেল সিডার ভিনেগার
একটি স্টাডি তে পাওয়া গিয়েছে যে নিয়মিত ১৫মিলি করে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার খেলে ১.২ থেকে ১.৭ কিলো পর্যন্ত ওজন কমার সম্ভাবনা থাকে।
এটি পেটের ক্ষুধা কমাতে অনেক বেশি কার্যকরী।
পেটের মেদ কমাতে এবং রক্তে ইনসুলিনের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
কিন্তু এটা সরাসরি খাওয়া যাবে না একদম।
এতে আমাদের শরীরের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাই এটা সবুজ সবজি বা পানির সাথে মিক্স করে খেতে হবে।
পানির সাথে খেতে চাইলে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে পানির পরিমাণ যাতে বেশি হয় আপেল সিডার ভিনেগার থেকে।
সবুজ শাক-সবজি
সবুজ শাক সবজি নিয়ে নতুন করর বলার কিছু নেই।
যিনিই ডায়েট করতে চায় তাদের খাবারের তালিকায় সবুক শাক সবজি থাকা মাস্ট।
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।
যা একটি ফ্যাট বার্নিং উপাদানে থাকা আবশ্যক। তার সাথে রয়েছে ক্যালসিয়াম সহ আরো এমন কিছু উপকারী উপাদান যা শরীরের ‘ফ্যাট বার্নিং’ প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করে।
ফলে খুব সহজেই মেদ ঝরে যায়।
তাছাড়া প্রোটিনের মতো ফাইবারও অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে, যে কারণেও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকতে বাধ্য।
ওজন কামতে গেলে নিয়মিত এক বাটি করে সেদ্ধ সবজি খেলে তা শরীরে শক্তি সঞ্চয় করতে আর ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মাছ
মাছ হচ্ছে প্রোটিন ও আমিষের উৎস।
প্রোটিন মাংসপেশি গঠনে সাহায্য করে। আর যত বেশি মাংস বা মাসল তত কম ফ্যাট।
মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন এবং নানা সব ভিটামিন এবং মিনারেল, যা শরীরের ওজন কমাতে ও হাড় গঠনেও নানা ভাবে সাহায্য করে থাকে।
নিয়মিত মাছ খেলে ওজন কমার সাথে সাথে হার্ট এবং ব্রেনের ক্ষমতাও বাড়বে।
দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতেও দেখবেন সময় লাগবে না।
কফি
কফি খুব পপুলার আমাদের মধ্যে।
এতে রয়েছে ক্যাফেইন, যা মানসিক ও শারীরিক কার্যকারিতা বাড়ায় এবং মেটাবলিজম উন্নত করে।
তবে আমরা সাধারণত দুধ ও চিনি দিয়ে বানিয়ে থাকি।
এতে ওজন তো কমবে না বরং শরীরের ক্ষতি সাধন করতে পারে।
ওজন কমানোর জন্য আমাদের খেতে হবে ডার্ক কফি, কোনো পরিমাণ দুধ ও চিনি ছাড়াই।
এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মধ্যবয়স্ক যাঁরা ১২ ঘণ্টার মধ্যে দুই ঘণ্টা পরপর ১০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন গ্রহণ করেন তাঁরা দিনে প্রায় ১৫০ ক্যালরি হারাচ্ছেন শুধু এই ক্যাফেইনের জন্যই। আর প্রাপ্তবয়স্করা পারছেন ৭৯ ক্যালরি।
রসুন
রসুনে থাকে allicin নামক উপাদান এটি মূলত এন্টি ব্যাকটেরিয়াল হলেও শরীরের চর্বির বিরুদ্ধে লড়াই করে।
Allicin উপাদান শরীরের মেদ ও খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে।
এই উপাদানের কারণে রসুনের এই উৎকট গন্ধ এবং ঝাঁঝালো স্বাদ।
এক কোয়া রসুন খেলে ক্ষুদা কমে আসে।
সেই সঙ্গে leptin যা একটি হরমোনের নাম এর ক্ষরণও কমতে শুরু করে।
তার কারণে বহুক্ষণ পেট ভরা থাকে।
বাদাম
ওজন কমাতে প্রোটিন, ফাইবার এর পাশাপাশি উপকারী ফ্যাটের কোনও বিকল্প নেই।
বাদাম এমন ই একটি উপাদান যার মধ্যে প্রোটিন ফাইবার এর পাশাপাশি রয়েছে উপকারী ফ্যাট।
পিনাট, ওয়ালনাট, পেস্তা, আমান্ড এসব বাদামই পরিমাণ মত খেলে আমাদের হার্ট ও ভালো থাকার পাশাপাশি ওজন কমবে।
তবে আমন্ড বেশি উপকারী বলে মানা হয়।
তাই বাদাম খেলে শুরু উপকার মিলবে কিন্তু বেশি পরিমাণে খাওয়া চলবে না। কারণ, এর মধ্যে আছে প্রচুর ক্যালরিও।
বেশি পরিমাণে খেলে ওজন কমার পরবির্তে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আপেল
আপেল হচ্ছে সবচেয়ে পুষ্টিকর ফল যাতে অনেক বেশি পরিমাণে রয়েছে ফাইবার।
চিয়া সিড
চিয়া সিড আপনি এক চামচ নিয়ে পানিতে মিক্স করে খেলে ৬০ ক্যালরি পূর্ণ হবে যা আপনার পেট ভরা ভাব রাখবে।
এটা টিস্যু গ্রোথ কে সক্রিয় করে তোলে যা ওজন কমানোর সাথে সাথে আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য ও ভালো কাজ করে
ব্রাসেলস স্প্রাউট
ব্রাসেলস স্প্রাউট হচ্ছে কপিজাতীয় একটি শীতকালীন সবজি।
অনেকটা বাঁধাকপির মতো।
প্রতিটি পাতার গোড়ায় বাঁধাকপির মতো একটি করে ছোট ছোট কুঁড়ি হয়।
এ কুঁড়ি বা বাডটি মূলত ব্রাসেলস স্প্রাউট।
সাধারণত কপিজাতীয় সবজিগুলোয় ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান বেশি থাকে।
ক্রুসেফেরি পরিবারের সবজিগুলোর মধ্যে ব্রাসেলস স্প্রাউটে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান- গস্নুকোসিনোলেটসের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
এ ছাড়া অন্যান্য কপিজাতীয় সবজির তুলনায় এতে এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, এ, কে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান।
পুষ্টিগুণ ও স্বাদ বিবেচনায় তাই এই সবজিটি উন্নত বিশ্বে সবার প্রছন্দ।
এর মধ্যে থাকা উপাদানগুলি ওজন কমাতে অবিশ্বাস্য ধরনের সাহায্য করে।
খেজুর
মিষ্টি জাতীয় এই ফল টি ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে।
রেগুলার ৪/৫ টি করে খেজুর খেলে তা শরীরে ফাইবারের মাত্রা বাড়ানোর সাথে সাথে ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়ামের ঘাটতিও মিটবে।
যে কারণে ফ্যাট জমবে না ও ওজন কমবে খুব নিমিষেই।
ব্রাউন রাইস
সাদা ভাত ওজন বাড়াতে পরিচিত হলেও ব্রাউন রাইস ওজন কমাতে পরিচিত।
ব্রাউন রাইস এ আছে ফাইবার যা ওজন কমাতে তো সাহায্য করেই, সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতে ভালো কাজ করে।
খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ফ্যাট বার্ন করতে এবং হার্টের দেখভালেও বিশেষ ভূমিকা রাখে।
কুমড়োর বীজ
কুমড়ো খেলে যেমন ওজন কমে, তেমনই কুমড়োর বীজ খেলেও ওজন কমতে কার্যকর।
এই বীজে আছে ফাইবার, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ফলেট, এবং গুচ্ছের অ্যামাইনো অ্যাসিড যা রোহ প্রতিরোধের পাশাপাশি ওজন কমাতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে
সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন কুমড়োর বীজ হলকা ভেজে খেলে সেটা ফ্যাট বার্ন হতে সাহায্য করে যার ফলে ওজন কমতে বাধ্য।
কলা
কলা পটাশিয়াম ও ম্যাগ্নেশিয়াম এ ভরপুর একটি ফল যা আমাদের হজমে সাহায্য করে।
এতে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় যেগুলো হজমে সাহায্য করে।
আর তার ফলে মেটাবলিজম রেট বেড়ে যায় ও মেদ ঝড়তে শুরু করে।