জন্ডিস নিজে কোনো রোগ নয়, বরং এটি রোগের লক্ষণ। জন্ডিস হতে পারে নানা কারণে।
জন্ডিস বলতে সাধারণত লিভারের প্রদাহজনিত জন্ডিসকেই বোঝানো হয়।
ভাইরাস থেকে শুরু করে নানা ধরনের ওষুধ, অ্যালকোহল ইত্যাদি কারণে লিভারে প্রদাহ হতে পারে।
আমাদের দেশে লিভার প্রদাহের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস ই, এ এবং বি ভাইরাস।
এর মধ্যে প্রথম দুটি পানি ও খাদ্যবাহিত আর তৃতীয়টি ছড়ায় মূলত রক্তের মাধ্যমে।
হেপাটাইটিস এ ভাইরাস প্রধানত শিশুদের জন্ডিসের কারণ, তবে যেকোনো বয়সের মানুষই হেপাটাইটিস ই ও বি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
সব সময় বিশুদ্ধ খাদ্য ও পানি খেতে হবে।
শরীরে রক্ত নেওয়ার দরকার হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং করে নিতে হবে।
ডিসপোজিবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করাটাও খুবই জরুরি।
বিশেষ করে হেপাটাইটিস বি-এর টিকা প্রত্যেকেরই নেওয়া উচিত।
যাঁরা সেলুনে শেভ করেন, তাঁদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আগে ব্যবহার করা ব্লেড বা ক্ষুর পুনরায় ব্যবহার করা না হয়।
জন্ডিস হলে টিকা নিয়ে কোনো লাভ হয় না।
তাই সুস্থ থাকতে আগেই টিকা নিতে হবে।
হেপাটাইটিস বি-এর ক্ষেত্রে প্রথম মাসে একটি, দ্বিতীয় মাসে একটি বা ছয় মাসের মধ্যে একটি ডোজ দেওয়া হয়।
হেপাটাইটিস এ-এর ক্ষেত্রে একটি ডোজই যথেষ্ট।
আর দুই ক্ষেত্রেই পাঁচ বছর পর পর বুস্টার টিকা দেওয়া হয়।
সাবধানতা
রোগীকে বাইরের খাবার সব সময় পরিহার করতে হবে।
বিশেষ করে খুব সাবধান থাকতে হবে পানির ক্ষেত্রে।
জন্ডিস থাক বা না থাক, না ফুটিয়ে পানি পান করা যাবে না।
বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে ফুচকা, চটপটি, বোরহানি আর সালাদের ব্যাপারে।
কারণ, হেপাটাইটিস এ বা ই-এর মতো পানিবাহিত ভাইরাসগুলো এসবের মাধ্যমেই ছড়িয়ে থাকে।
বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের খুব সাবধান থাকা উচিত।
এ সময় মায়েরা প্রায়ই বাইরের খাবার খেয়ে থাকেন।
আর গর্ভাবস্থায় শেষ তিন মাসে যদি হেপাটাইটিস ই হয়, তবে তা থেকে মা ও গর্ভের শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি।
খাবার কেমন হবে?
খাবারের ব্যাপারে তেমন কোনো বিধিনিষেধ নেই।
তবে ভাইরাল হেপাটাইটিসে যকৃতের কার্যকারিতা কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়।
তাই যকৃৎ ও পিত্তথলির ওপর অতিরিক্ত কাজের চাপ সৃষ্টি না হয় এমন কিছু খাবার এড়িয়ে চলাই উচিত।
যেমন চর্বিজাতীয় খাবার (ঘি, মাখন, যেকোনো ভাজা খাবার বা ফাস্টফুড, গরু-খাসির মাংস ইত্যাদি)।
জন্ডিসের রোগীদের ক্যালরির উৎস হিসেবে তাই সহজে হজমযোগ্য সরল শর্করা, যেমন: শরবত, ভাত, জাউভাত, সুজি, রুটি ইত্যাদি বেশি খাওয়া উচিত।
বিশ্রাম কেমন হবে?
পূর্ণ বিশ্রাম মানে এই সময়ে ভারী কোনো কাজ বা পরিশ্রমের কোনো কাজ না করা।
কারণ, ভাইরাল হেপাটাইটিস লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
ফলে পূর্ণ বিশ্রাম না নিলে বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের ফলে জন্ডিসের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জটিল আকার ধারণ করতে পারে।