রুক্ষ-শুষ্ক আবহাওয়া, রোগবালাই, পুষ্টি ও হাইড্রেশনের অভাবে শীতকালে পা ফেটে যায় খুব তাড়াতাড়ি।
তাছাড়া আমাদের পায়ের চামড়া মোটা, আর এতে কোন ঘর্ম ও তৈল গ্রন্থি নেই, তাই পা স্বাভাবিকভাবেই শুষ্ক হয়।
যা শীতের জলীয় বাষ্পহীন বাতাসে ফেটে যায়। এবার ঘরোয়া কিছু পদ্ধতিতে শীতকাল সহ সারা বছর পা রাখুন ক্র্যাক-ফ্রী।

পেঁয়াজ
পেঁয়াজ ব্লেন্ডারে রস করে তার সাথে ১ চা চামচ মধু আর অলিভ অয়েল মিশিয়ে গোড়ালিতে ২০-২৫ মিনিট মাসাজ করুন।
এরপরে ঠান্ডা পানিতে পা ধুয়ে ফেলুন। ১ সপ্তাহ এই টোটকা ব্যবহার করুন।
এছাড়াও পেঁয়াজের রসের সাথে ক্যাস্টর অয়েল, অলিভ অয়েল, সরিষার তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
ফাটা জায়গায় মিশ্রণটা মাসাজ করে মোজা পরে ঘুমান। সকালে উঠে পা পরিষ্কার করে নিন।

তেল
নারিকেল তেল পায়ে মালিশ করে মোজা পরে ঘুমাবেন। এই তেল পায়ের ডেড স্কিন সেলস দূর করে পা কে হাইড্রেটেড রাখে।
অথবা সপ্তাহে তিন-চারদিন অলিভ অয়েল মাসাজ করতে পারেন।
মাসাজ করে পায়ে মোজা পরে ১ ঘন্টা থাকুন এবং ধুয়ে ফেলুন।
চাইলে তিলের তেল, আমন্ড অয়েল, সরিষার তেল ইত্যাদিও ব্যবহার করতে পারেন।

মধু
একটি বাটিতে আধা কাপ মধু মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন।
এরপরে উঠিয়ে হালকা ঘষে মাসাজ করে নিন। এরপরে ঝামাপাথর দিয়ে এক্সফোলিয়েট করে ধুয়ে ফেলুন।
পা শুকিয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগান। প্রতিদিন রাতে মধুর মাসাজে পা থাকবে নরম ও কোমল।

লেবু ও ভ্যাসলিন
প্রথমে গরম পানিতে ১৫-২০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন। এরপরে পা উঠিয়ে মুছে নিন।
১ টেবিল চামচ ভ্যাসলিনে ৫ ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে পায়ের ফাটা জায়গায় লাগান।
যেখানে ফাটার সম্ভাবনা আছে সেখানেও লাগান। এরপরে উলের মোজা পরে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে উঠে পা ধুয়ে ফেলবেন।

গোলাপজল ও গ্লিসারিন
২ টেবিল চামচ গোলাপজলের সাথে ২ টেবিল চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে পায়ে হালকা করে মাসাজ করে নিন।
সপ্তাহে তিনদিন রাতে ঘুমানোর আগে এটা করবেন। সকালে পা ভালোমতো ধুয়ে নিবেন।

কলা
পাকা কলা ব্লেন্ড করে মসৃণ পেস্ট বানিয়ে পায়ের পাতায় ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন।
এরপরে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। কলা ব্যবহারে পা থাকবে নমনীয়, এটা পা কে ময়েশ্চারাইজ করবে।
অথবা ১টা পাকা কলা আর ১টা অ্যাভোকাডো মিশিয়ে ঘন পেস্ট বানিয়ে পায়ে লাগান।
১৫-২০ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানিতে পা ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিনদিন এই ফুট মাস্ক ব্যবহার করবেন।

অ্যালোভেরা
সপ্তাহে চার-পাঁচদিন অ্যালোভেরার ব্যবহার পা ফাটা থেকে মুক্তি দিবে।
প্রথমে কুসুম গরম পানিতে পা ধুয়ে ঝামাপাথর দিয়ে এক্সফোলিয়েট করে নিন।
নরম তোয়ালে দিয়ে পা মোছার পরে মোটা করে অ্যালোভেরার জেল লাগান।
এরপরে সুতি মোজা পরে ঘুমান। সকালে আবার কুসুম গরম পানিতে পা ধুয়ে নিন।

এপসম সল্ট
একটি পাত্রে কুসুম গরম পানিতে আধা কাপ এপসম সল্ট ভালো করে মিশিয়ে নিন।
এরপরে ১৫ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখুন। এরপরে ঝামাপাথর দিয়ে আস্তে আস্তে এক্সফোলিয়েট করে মৃত কোষ তুলে ফেলুন।
সপ্তাহে দুইদিন বা তিনদিন এপসম সল্ট ব্যবহার করবেন।

ময়েশ্চারাইজার বা ফুট ক্রিম
রাতে ঘুমানোর আগে কুসুম গরম পানিতে পা ৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখবেন।
তারপর পা মুছে ভালো মানের ফুট ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।
ময়েশ্চারাইজার বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে, গোসলের পরে, ঘুমানোর আগে ব্যবহার করবেন।
হায়ালুরনিক এসিড, ল্যাকটিক এসিড, গ্লিসারিন, ল্যানোলিন, ইউরিয়া, পেট্রোলিয়াম, ডাইমেথিকোন সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার পায়ের জন্য ভালো।

মোজা ও জুতা
শীতে সুতির মোজা পা কে রাখবে আর্দ্র এবং জীবাণুমুক্ত।
রাতে ঘুমানোর সময়ে এবং বাইরে বের হওয়ার সময় সুতির মোজা পরবেন। পা ফাটার সমস্যা কমে যাবে।
সাধারণ মোজার পাশাপাশি ময়েশ্চারাইজিং মোজাও পরতে পারেন। এতে থাকা ভিটামিন ই, অ্যালোভেরা, এবং শিয়া বাটার আপনার পা কে রাখবে সতেজ, সুন্দর, এবং ক্র্যাক-ফ্রী।
আর জুতার ক্ষেত্রে পা ঢাকে এমন, বিশেষ করে গোড়ালি ঢাকা জুতা পরবেন। স্নিকার, ব্যালে শু, পিপ টো, পাম্প শু ইত্যাদির মধ্য থেকে একটি বেছে নিতে পারেন।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল
৪-৫ টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল কেটে তেলটা বের করে নিন।
এরপরে তেলটা পায়ে ২ মিনিট ধরে হালকা মাসাজ করে নিন। এরপরে ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে দুইদিন এভাবে ই ক্যাপসুল ব্যবহার করবেন।
চাইলে ক্যাপসুলের তেলটা পেট্রোলিয়াম জেলির সাথে মিশিয়েও লাগাতে পারেন।
রাতে লাগিয়ে মোজা পরে ঘুমাবেন, পা নরম থাকবে।

মোমবাতি ও তেল
গলানো প্যারাফিন মোমের সাথে নারিকেল তেল অথবা সরিষার তেল মিশিয়ে ফাটা গোড়ালিতে লাগিয়ে রাখুন।
লাগানোর সময়ে মোমটা যেন পুরোপুরি লিকুইড থাকে সেটা খেয়াল রাখবেন।
মোম-তেল লাগানোর পরে ঐ অবস্থাতেই মোজা পরে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে শুকিয়ে যাওয়া মোম তুলে পা ধুয়ে ফেলুন।

শ্যাম্পু
গামলায় কুসুম গরম পানিতে শ্যাম্পু, লেবুর রস, এবং সামান্য লবণ মিশিয়ে নিন।
পা দুটো এতে ১০-১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। তারপর পা উঠিয়ে আলতো করে এক্সফোলিয়েট করে মৃত চামড়া তুলে ফেলুন।
তারপরে পা ধুয়ে নরম তোয়ালে দিয়ে পা মুছে নিন। সপ্তাহে অন্তত একদিন এভাবে করুন।
বাইরে থেকে আসার পরে শুধু শ্যাম্পু দিয়েও ফুটবাথ নিতে পারেন।

চালের গুঁড়া, মধু, লেবুর রস, দুধের সর
১ টেবিল চামচ চালের গুঁড়া, ১ চা চামচ মধু, ১ চা চামচ লেবুর রস, এবং ১ টেবিল চামচ সর মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন।
পায়ে ১০-১৫ মিনিট এই প্যাক লাগিয়ে রাখুন। এরপর পা ধুয়ে শুকিয়ে ময়েশ্চারাইজার বা ফুট ক্রিম লাগাবেন।