যেকোনো ত্বকের চেয়ে শুষ্ক ত্বকের যত্ন রাখা কিছুটা কঠিন।
এই ধরনের ত্বক খুব তাড়াতাড়ি ময়েশ্চার হারিয়ে শুষ্ক হয়ে পড়ে।
ড্রাই স্কিনের সাথে অনেক ধরনের সমস্যা জড়িয়ে থাকে যেমন: অতিরিক্ত শুষ্কতা, সংবেদনশীলতা, ইচিং, রেডনেস, ডালনেস ইত্যাদি।
তাই আসুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে গরমে আপনার ড্রাই স্কিনের ময়েশ্চার ধরে রেখে স্কিনকে আরো কোমল এবং উজ্জ্বল করে তুলবেন।
ড্রাই স্কিন হওয়ার কারণ
আমাদের ত্বকে কিছু বিশেষ ফ্যাট থাকে।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো ফ্যাটি অ্যাসিড (লিপিড)।
এই ফ্যাট ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রেখে ত্বককে নমনীয় ও কোমল রাখে।
কোনো কারণে যদি এই বিশেষ উপাদানগুলি কমে যায়, তাহলে ত্বকের উপরিভাগ তার আর্দ্রতা হারিয়ে শুষ্ক ও খসখসে হয়ে উঠতে পারে।
এবং সেখানে ক্র্যাক লাইন দেখা দিতে পারে। এছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা সিরোসিসও ঘটাতে পারে, যা শুষ্ক ত্বকেরই অপর নাম।
এছাড়াও জেনেটিক, আবহাওয়া এবং আমাদের স্কিনের বিভিন্ন সমস্যার কারণে ত্বক শুষ্ক হতে পারে।
অনেকসময় সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরেও হার্স ক্লিনজার, মেডিকেশন এসবের উপর ভিত্তি করে ত্বকে পরিবর্তন আসে।
স্কিন টান-টান করে ফেলা ক্লিনজার ব্যবহার করবেন না
যদি আপনি কোনো শুষ্ক অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বাস করেন, তাহলে সেখানকার শুষ্ক বাতাসের প্রভাবেও স্কিন ড্রাই হয়ে যেতে পারে।
ক্লোরিনযুক্ত পানিতে অতিরিক্ত সাঁতার কাটলে বা গোসল করলে বিশেষ করে গরম পানি বা ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
ভিটামিন এ ও বি এবং জিংক ও ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব হলেও ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
এয়ার কন্ডিশনারে সবসময় থাকলে, অতিরিক্ত পারফিউম ব্যবহার করলে, ধূমপান ও অ্যালকোহল, ক্যাফেইন এর কারণেও স্কিন ড্রাই হয়ে যায়।
গ্রীষ্মকালে ড্রাই স্কিনের যত্নের ক্ষেত্রে করণীয়
প্রথমত একটি মাইল্ড, অ্যালকোহল-মুক্ত এবং হাইড্রেটিং ক্লিনজার ব্যবহার করুন।
ডাবল ক্লিনজিং এর জন্য অয়েল ক্লিনজার বা ক্লিনজিং বাম কিংবা ক্লিনজিং অয়েল ব্যবহার করুন।
সোডিয়াম লরিল সালফেট এর মতো হার্স উপাদান এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। নন-ফোমিং ক্লিনজার ব্যবহার করুন।
দিনে দুই বারের বেশি মুখ না ধোয়ার চেষ্টা করবেন। আপনার ত্বক শুকানোর সাথে সাথেই ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
ত্বকে বাড়তি হাইড্রেশন এর জন্য ব্যবহার করতে পারেন হাইড্রেটিং টোনার।
৫০-৫০ গ্লিসারিন-পানি মিক্স করে গ্লিসারিন এর টোনার বানাতে পারেন।
ড্যাম্প স্কিনে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন
দিনে কয়েকবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, বিশেষ করে গোসলের পরে বা যখন আপনার ত্বক শুষ্ক মনে হয়।
জেল বেইসড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন না।
সুগন্ধি-মুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন যা ব্রণ সৃষ্টি করে না এবং যাতে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থ নেই।
ইউরিয়া, সিরামাইড, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং গ্লিসারল (গ্লিসারিন নামেও পরিচিত), শিয়া মাখন এবং কোকো মাখনের মতো উপাদান আছে এমন প্রোডাক্ট স্কিন কেয়ারে যুক্ত করুন৷
দীর্ঘক্ষণ গোসল করবেন না
গরম পানিতে গোসল করা বন্ধ করুন। নরম সুতির আরামদায়ক কাপড় পরার চেষ্টা করুন।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
AHA আছে এমন এক্সফোলিয়েটর সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করতে পারেন। এর বেশি না।
কমপক্ষে এসপিএফ ৩০ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন এবং প্রতি দুই ঘন্টা পর পর সানস্ক্রিন রিএপ্লাই করুন।
বাসায় থাকলেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
ড্রাই স্কিনের জন্য হায়ালুরোনিক অ্যাসিড জাদুর মতো কাজ করে।
তাই স্কিন কেয়ার রুটিনে রাখতে পারেন হায়ালুরোনিক অ্যাসিড-যুক্ত ময়েশ্চারাইজার, সিরাম, সানস্ক্রিন ইত্যাদি।
প্রতিদিন মৌসুমি ফল খাওয়ার চেষ্টা করবেন এবং বেশি বেশি শাকসবজি খাবেন
আপনি যদি মেকআপ করে থাকেন তাহলে প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মেকআপ তুলতে ভুলবেন না৷
সপ্তাহে প্রয়োজনে একবার বা দুইবার হাইড্রেটিং শিট মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন৷ যেহেতু ড্রাই স্কিন তাই স্যালিসাইলিক অ্যাসিড যুক্ত প্রোডাক্ট কম ব্যবহার করুন।
ধূমপান, মদ্যপান এর অভ্যাস থাকলে তা পরিবর্তন করতে হবে। কারণ নিকোটিন ত্বককে আরও শুষ্ক ত্বক করে তোলে।
আপনার বাড়ির বাতাসে আর্দ্রতা যোগ করতে একটি হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন।
সর্তকতা
বেশি শুষ্ক ত্বক হলে এবং জ্বালাপোড়া করলে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।